মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১২

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১১-২০১২, Annual Report of Kalaboti Mudra 2011-2012

(তৃতীয়াংশ)
তাই প্রয়োজন এক জোট হওয়া
বিগত বছরের সমীক্ষায় কলাবতী মুদ্রা উদ্যম নিয়েছিল, মধুমঙ্গল মালাকারের নেতৃত্বে কলাবতী মুদ্রার সহায়তায় গ্রাম শিল্পীদের নিয়ে সংগঠণ গড়ে তুলতে. মধুমঙ্গল মালাকার নৈতিকভাবে রাজি ছিলেন এই কাজটি নিজের চওড়া কাঁধে তুলে নিতে. কিন্তু কলাবতী মুদ্রাকে নানান দপ্তরি কাজে তাঁকে সাহায্য করতে হবে. এই ছিল তাঁর শর্ত.  কলাবতী মুদ্রা আঁর শর্তে বিলকুল রাজি হয়ে যায়.
নতুন বছরের এপ্রিল মাসের এক বৈঠক বসে. অংশগ্রহণ করেন দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকার, পুরুলিয়ার নেপাল সূত্রধর,  দার্জিলিংএর ভবানী বিশ্বাস, কলকাতার বিশ্বজিত চক্রবর্তী এবং কলাবতী মুদ্রার পক্ষে ড. ললিতা ঘোষ, চন্দন চক্রবর্তী এবং বিশ্বেন্দু নন্দ. গত বছরের প্রস্তাবমত ঠিক হয়, দুটি সংস্থা গড়ে উঠবে. একটির নাম হবে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘ. সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয়, এই সংঘ দুটির সদস্যপদে ৭০ শতাংশ গ্রামশিল্পীকে থাকতেই হবে. বাকি সংখ্যা শিল্পী বন্ধুরা হতে পারেন. মূলতঃ এই সংরক্ষণের ব্যবস্থার প্রস্তাব করে কলাবতী মুদ্রা. বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত সদস্য এতে রাজে হন. বিগত বছরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বৈঠকেই দুটি সংগঠণের নাম, তাদের কাজের উদ্দেশ্য এবং সংবিধানের খসড়া পেশ করেন বিশ্বেন্দু নন্দ. কয়েকটি পরিবর্তন এবং নতুন কয়েকটি ভাবনা আর  বিষয় যোগ করার ভাবনা ভাবা হয়. সেই ভাবনাগুলিও মেনে নেন উপস্থিত সদস্যরা. এবং ঠিক হয় এই  পরিবরিতনগুলি নিয়ে আগামী মাস থেকে সংস্থা দুটি নথিকরণের কাজটি শুরু করে দেবে কলাবতী মুদ্রা.
ঠিক হয় জুন মাসে বড়িষা এডিএসএআর দপ্তরে সংস্থা দুটির নথি করণ আর কলাবতী মুদ্রার সংস্কার হবে. প্রস্তাব আসে আগামী তিন বছর এই দুই সংস্থা মূলতঃ উত্তরবঙ্গের ছটি জেলা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করবে. সম্ভব হলে, উপযুক্ত কর্মী পাওয়া গেলে অন্য জেলাগুলোতে সংগঠণ তার কর্মউদ্যোগও বাড়ানোর কাজ করবে. কিন্তু এই ছটি জেলায় সংগঠণ বিস্তার আপাততঃ সংগঠণের প্রাথমিক কাজ.
নানান সরকারি-বেসরকারি-সাংগঠণিক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে জুন মাসে এই সংগঠণটি সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হয়. সে সময় কলকাতায় সংগঠণগুলির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন. নতুন করে ঠিক হয় মধুমঙ্গল মালাকার এবং নেপাল সূত্রধর এই দুই সংগঠণের প্রধাণের পদে থাকবেন. এবং অন্যান্যরা অছ্মন্ডলীরূপে কাজ করবেন.  এই দুই সংগঠণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে থাকলেন মধুমঙ্গল মালাকার, চন্দন চক্রবর্তী এবং ড. ললিতা ঘোষ এবং কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বেন্দু নন্দ. মনে রাখতে হবে বিশ্বেন্দু নন্দ শুধুই কলাবতী মুদ্রার কর্মী, তিনি কলাবতী মুদ্রার সদস্য, কিন্তু অছি সদস্য নন.
ঠিক হয়, নথিকরণের পর কলাবতী মুদ্রার পক্ষে এই সংগঠণ দুটির সাংগঠণিক কর্ম দেখবেন মধুমঙ্গল মালাকার এবং তাঁকে সব কাজে সহায়তা করবেন বিশ্বেন্দু নন্দ.  
সংগঠণটি নথিভুক্ত হওয়ার পর আবার একবার উত্তরবাঙলা ভ্রমণের পরিকল্পনা হয়. নথি করণের সময় কলাবতী মুদ্রারও অছি পরিষদ সংস্কৃত করা হয়, মধুমঙ্গল মালাকার এবং কৃষি বিষেষজ্ঞ নিবেদিতা দাস রায় কলাবতী মুদ্রার অছিতে প্রবেশ করেন.  
দুটি সংস্থা সরকারি খাতায় নথিকরণের পরের মাসে আবার নতুন করে সমগ্র উত্তরবঙ্গের জেলায় নানান গ্রাম, নানান শিল্পীর সঙ্গে বৈঠক করেন নতুন সংগঠণের অছিবৃন্দ. সমস্ত ঘোরার সমীক্ষা, তাঁদের বক্তব্য এবং আরও কী করা যায় সে বিষয় নিয়ে আগস্ট মাসে নতুন করে বৈঠকে বসেন দুই সংগঠণের কর্মীবৃন্দ. সংগঠণদুটির আগামীদিনের কী কাজ সেই বিষয়ে বেশকিছু ভাবনা ও পরিকল্পনাতৈরি হয়. দক্ষিণবঙ্গের প্রতিনিধি এবং কলাগুরু নেপাল সূত্রধর বলেন শুধু উত্তরবঙ্গের ওপর জোর দিলে সংগঠণ দাঁড়াবে না. তাঁরই বক্তব্যের সূত্র ধরে দক্ষিণবঙ্গে নতুন করে কয়েকটি জেলায় সংগঠণের শাখা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়. নানান বিতর্কের মধ্যে এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়. ছিক হয় উত্তরবঙ্গেরমতই দক্ষিণবঙ্গেও এই অছি পরিষদ নতুন করে ভ্রমণ করবে এবং শিল্পীদের সংগঠিত করবে.
তিনদফা ভ্রমণের পর শিল্পীদের পরামর্শ, তাদের প্রস্তাব এবং নানান ভাবনা একত্রিত করে প্রাথমিকভাবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের নাম ঠিক হয়-
কোচবিহারে প্রবীণ বাঁশ ও কাঠ শিল্পী গৌরাঙ্গ বর্মণ,
জলপাই গুড়িতে যৌথভাবে রাভা সমাজের মাথা গনট রাভা এবং মেচ সমাজের প্রধান দারেন্দ্র ঈশ্বরারী,
দার্জিলিংএর কাঠ শিল্পী ভবানী বিশ্বাস,
দক্ষিণ দিনাজপুরের খন শিল্পী গণেশ রবিদাস,
উত্তর দিনাজপুরের সংগঠক পরেশ সরকার
আর মালদহে বাঁশ শিল্পী মনোরঞ্জন বিশ্বাস
প্রত্যেক শিল্পীই নিজেরমতকরে তাঁর এলাকায় সংগঠণ বাড়াবার কাজ করবেন. মাঝে মাঝে দুটি সংগঠণের অছি পরিষদ সেই সব এলাকা ভ্রমণ করবেন, যদি প্রয়োজন হয়. তবে জেলা সংগঠণ স্বাধীণভাবে তাঁদের কাজ করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে জেলা প্রতিনিধিদের. শুধু সদস্যপদই নয় বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে জেলা প্রতিনিধিদের. ঠিক একবছর পর জেলা প্রতিনিধিদের কাজকর্ম খতিয়েদেখার পর জেলা সংগঠণ তৈরি হবে. এর পরও অছি পরিষদের সদস্যরা এবং কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে যৌথভাবে জেলায় বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করা হয়. আগামী দিনে সংগঠণের কাজকর্ম বিষয়ে বিশদে আলোচনা করে কাজকর্মের দিশা ঠিক করার ব্যবস্থাও হয়.
তবে প্রাথমিকভাবে দলের সংগঠণকে মজবুত করে তুলতে আলোচনার সভার ওপর জোর দেওয়া হয়. ইতিমধ্যে সংঘের এক প্রতিনিধি ড. ললিতা ঘোষ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রতনিধিরূপে বালটিমোরের বঙ্গ সংস্কৃতি উত্সবে অংশগ্রহণ করতে যান. ঠিক তার পরই মধুমঙ্গল মালাকার ইংলন্ডে আন্তর্জতিক পাখি মেলায় অংশগ্রহণ করেন.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন