সংস্কৃতি গুরুকুল
বিগত ২০০৫ সাল
থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বড়িষা জনপদের জাগৃহি ক্লাবে একটি সংস্কৃতি গুরুকুল চালাচ্ছে
কলাবতী মুদ্রা. সংস্থা প্রধাণ ড. ললিতা ঘোষ স্বয়ং এই শিক্ষণ কেন্দ্রটির নেতৃত্ব
দেন. মাত্র দুটি শিষ্যা নিয়ে যে গুরুকুলের যাত্রা শুরু, সেই কেন্দ্রটিতে আজ প্রায়
৫০টি ছাত্রছাত্রী নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে.
বিগত ৫ বছর ধরে
যেসব ছাত্রছাত্রী এই কেন্দ্রে নাচ, গান, বাদ্যযন্ত্র বাদন শিখছে, তারাই তাঁদের
প্রিয় দিদি ললিতা ঘোষকে নানান প্রশিক্ষণে সহায়তা করে থাকেন. এছাড়াও নানান
সংস্কৃতি নথিকরণের কাজে এই সব সদস্যরা কলাবতী মুদ্রার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে
সাহায্য করে.
২০১০ সালে এই
কেন্দ্র থেকে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী চন্ডীগড়ের প্রাচীণ কলা কেন্দ্র থেকে নানান ধরণের
পরীক্ষা দিয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়.
এই নৃত্য
কেন্দ্রে ভরতনাট্যম ও কথক, এই দুটি শাস্ত্রীয় নৃত্য শেখানো হয়. এছাড়াও ললিতা ঘোষ
যখন ভারত সরকারের সঙ্গীত ও নৃত্য বিভাগে নৃত্যাঙ্গণারূপে কাজ করতেন তখন ভারতে
নানান এলাকায়, সমাজে গিয়ে তিনি নানান নৃত্য শিখে দলকে শেখাতেন. বাঙলায় এক্কেবারে
সঠিক এবং সুন্দর লোক ও আদিবাসী নৃত্য তিনিই নানান সমাজে গিয়ে শেখেন. তাঁর সেই অধীত
বিদ্যা তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের উজাড় করে দেন.
এছাড়াও কলাবতী মুদ্রা জাগৃহী কেন্দ্রের বাইরে দুটি
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাচ্ছে.
একটি গণিপুর
শীতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে. বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাঁদের আর্থিক দুর্বল
ছাত্রছাত্রীদের জন্য কলাবতী মুদ্রা সপ্তাহে একদিন.
অন্যটি চলে
রাজপুর-সেনারপুর পৌর সভার প্রধাণ শ্রী কমল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে.
নৃত্যদল
বিভিন্ন ধরণের
শাস্ত্রীয়, লোক, রবীন্দ্র এবং আদিবাসী নৃত্য শিখিয়ে সেই নৃত্য বিভিন্ন মঞ্চে
প্রদর্শণ করার উদ্যম গ্রহণ করেছে কলাবতী মুদ্রা. এবছর দিল্লির বিভিন্ন পুজো
কমিটিতে অনুষ্ঠান করে কলাবতী মুদ্রা. এগুলি হল
লোদি রোড,
মুনিরকা,
ফরিদাবাদ কালিবাড়ি
হরিয়ানা কালিবাড়ি
নয়ডা
প্রগতি বিহার
মথুরা তৈলশোধনাগার সহ অন্যান্য
পুজো প্যান্ডালে বাঙলার সংস্কৃতি প্রদর্শণ করে কলাবতী মুদ্রার সদস্যরা.
২০০৯-১০এর বছরটিতে কলাবতী
মুদ্রা শিল্পীরা অন্য যেসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন
ভারতীয় জাদুঘর উত্সব, কলকাতা
বারাবতি উত্সব, কটক, ওড়িশা
অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি - দমদম
সঙ্গীত নাটক আকাদেমি -
নৃত্যপর্ব, গুয়াহাটি
ভাষা ও চেতনা সমিতি - ২১
ফেব্রুয়ারি, কলকাতা
পুরুলিয়া মানবাজার উত্সব,
মানবাজার, পুরুলিয়া
জাগৃহি ক্লাব, কলকাতা
মোহর কুঞ্জ - ভাষা ও চেতনা
সমিতি, কলকাতা
গহেরপুর বিবেকানন্দ যুব সংঘের
রজত জয়ন্তী বর্ষ, দক্ষিণ ২৪ পরগণা
সাউড়ি আন্তর্জাতিক
বিবেকানন্দ গ্রামীণ মেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর
দাঁতন গ্রামীণ
মেলা , পশ্চিম মেদিনীপুর
কলাবতী মুদ্রা
এবছরই কৃষ্ণনগরে, চিত্রবণের সঙ্গে মিলে বাঙলা নববর্ষ উত্সব আয়োজন করে. সেই
অনুষ্ঠানে কলাবতী মুদ্রার শিল্পীরা নানান ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শণ করেন. এছাড়াও স্থানীয় শিল্পীরা এই
অনুষ্ঠানে কলাতী মুদ্রার শিল্পীদের সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শণ করেন.
অনুসন্ধানকর্ম
পোড়ামাটি
কলাবতী মুদ্রা
তাদের লক্ষ্য ঠিক করে এবছর বেশ কয়েকটি বিশদ প্রযুক্তি নথিকরণ কাজ করে.
প্রাথমিকভাবে সে বাঙলার পোড়ামাটির কাজ বিষয়ে একটি নথিকরণের উদ্যম গ্রবণ করে. সেই সমীক্ষাপত্রটি ইংরেজিতে লোকফোক ব্লগে বিশদে প্রকাশিত
হয়েছে. সেই লেখাটি এই বাতসরিক
প্রতিবেদনের ইংরেজি বিভাগে বিশদে তুলে ধরা হয়েছে. এই সমীক্ষাটি অংশগ্রহণ করেন
কর্মাধ্যক্ষ্য বিশ্বেন্দু নন্দ এবং অছি সদস্য বিধান বিশ্বাস. এ বিষয়ে বাঁকুড়ার
পাঁচমুড়া এবং দিনাজপুরের কুনুরে বিশদে অনুসন্ধান চালানো হয়.
হাতিরদাঁতের
শিল্পকর্ম
বাঙলায় বহুকাল
থেকে হাতির দাঁতের শিল্পকর্মের প্রচলণ রয়েছে. দীনেশচন্দ্র সেনমশাই বর্ণিত
বৃহতবঙ্গের অসমে হস্তিবিদ্যার্ণব নামক একটি পুঁথি পাওয়া যায়. এই পুঁথিটির মূল
উদ্দেশ্য হাতিকে বিভিন্ন কর্মে শিক্ষা
দেওয়া. আজও এই পুঁথিটি মাজুলির আউনিআটি সত্রে পাওয়া যায়. আউনিআটি সত্রের
সংগ্রহশালায় একটি হাতির দাঁতের পাটি রাখা আছে, যা পূর্বভারতের শিল্পকর্মের সঙ্গে
তার প্রযুক্তির অবস্থান বাখান করে.
আজ এটি নিষদ্ধ
শিল্পকর্ম. এখনও মুর্শিদাবাদের খাগড়ায় পুরোনো কিছু কারিগর এই শিল্পের রেশ ধরে
রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু এই শিল্পটি মারা গিয়েছে এই মন্তব্য সহজেই করা চলে. হাতির
দাঁতের শিল্পীরা আজ শোলার কাজ করে থাকেন. খাগড়ার অরুণ ভাষ্কর জানালেন এই কাজের
জন্য সরকারি সম্মতির প্রয়োজন হয়. কিন্তু হাতির দাঁত সহজে পাওয়া যায় না বলেই তিন
চার ইঞ্চির একটি পুতুলের দাম ১০ হাজার টাকারও বেশি. তাই সাধারণ মানুষ এই দ্রব্য
কিনতে পারেন না. তিনি আজ জীবিকা নির্বাহ করতে কাঠ আর শোলা মাধাযমে শিল্পকর্ম
করেন. এরও বিশদ বিবরণ লোকফোক ব্লগে পাওয়া যাবে.
এছাড়াও শোলা
শিল্প, দিনাজপুরের মুখোশ শিল্প, দিনাজপুরের বালাসে মৃতপ্রায় পুতুলনাচ শিল্প,
দিনাজপুরেরই মাদুর শিল্প এবং খুনিয়াডাঙির কাঠ ও বাঁশশিল্প এবং শান্তিনিকেতনের
কাঁথা শিল্প বিষয়ে নতুন করে আবস্থা বিচার করেন কলাবতী মুদ্রা একটি সমীক্ষক দল. এই
দলের নেতৃত্ব দেন মধুমঙ্গল মালাকার.
আদিবাসী ঔষধ
কর্মশালা
এবিষয়েও কলাবতী মুদ্রা গুরু বাজার হেমব্রমের সঙ্গে একটি বিশদ কর্মশালা আয়োজন
করে. এই কর্মশালায় তিনি নানান সাঁওতাল সমাজের ঔষধ বিষয়ে আলোচনা করেন. তার বিশদ
বিবরণ এই প্রতিবেদনের ইংরেজি সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে. এই আলোচনাসভাটি পরিচালনা
করেন প্রখ্যাত কবি জয়া মিত্র.
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে
বাঙলার লৌকিক ও আদিবাসী কারু শিল্প কর্মশালা
বাঙলার লৌকিক ও আদিবাসী কারুশিল্প বিষয়ে পশ্চিমবাঙলার ২টি বিদ্যালয়ে
কর্মশালার আয়োজন করে কলাবতী মুদ্রা. একটি দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণায়, অন্যটি
উত্তরবঙ্গের ইটাহারের মুস্কিপুর গ্রামে.
কলকাতার প্রান্তেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার
গণিপুর গ্রামের গণিপুর শীতলা বিদ্যালয়ে দু দিনের এি কর্মশালার আয়োজন করা হয়.
প্রধাণ শিক্ষক ড. সুজীব করের ব্যক্তিগত উদ্যমে এই কর্মশালার আয়োজন ঘটে. বিশিষ্ট
লোকসংস্কৃতিবিদ বিধান বিশ্বাস এই কর্মশালা পরিচালনা করেন. দু দিনে দিনাজপুরের শোলা
শিল্প, মেদিনীপুরের পটশিল্প এবং পুরুলিয়ার মুখোশ শিল্প বিষয়ে বিশদ কর্মশালায় বেশ
সাড়া মেলে. আন্তর্জাতিক শোলা শিল্পী মধুমঙ্গল মালাকার, পট শিল্পী বাহার ও জামেলা
চিত্রকর এবং মুখোশ শিল্পী, শিল্পগুরু নেপাল সূত্রধর এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে
ছাত্রছাত্রীদের সমাজ সচেতনতা বাড়াবার কাজ করেন.
ঠিক একই কর্মশালা আয়োজিত হয়, বড়গ্রাম মুস্কিপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গণে, একই
শিল্পী সমন্বয়ে. এই কর্মশালা পরিচালনা করেন মধুমঙ্গল মালাকার. শোলা শিল্পী
মধুমঙ্গল মালাকার, পট শিল্পী বাহার ও জামেলা চিত্রকর এবং মুখোশ শিল্পী, শিল্পগুরু
নেপাল সূত্রধর এই কর্মশালায় অংশ নেন এবং সুকুমারমতি বালক-বালিকাদের এ বিষয়ে সমাজিক
সচেতনতা বাড়ান.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন