(চতুর্থাংশ)
অন্যান্য কাজ
এবছর কলাবতী মুদ্রা খুব বেশি
কাজ করতে পারে নি. তার একটা বড় সময় আর সম্পদ এই দুই সংগঠণের ভিত্তি মজবুত করতে
ব্যায় হয়েছে. ফলে যতটুকু কাজ করার দরকারছিল, ততটা কাজ সে করতে পারে নি.
তবে কয়েকটি সমীক্ষা করেছে,
খাগড়ার শোলার কাজ, তাহেরপুরের সরা, দিনাজপুরের কালিকাচ, মুস্কিপুর গ্রামের কার্তিক
পুজো আর উত্তরবঙ্গের আলপনা. এর বিশদ বিবরণ রয়েছে লোকফোক ব্লগটিতে. কলাবতী মুদ্রা
আবারও বলছে, তার দৃষ্টিতে দুটি সংগঠণের এবছর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সংগঠণ
গড়ে ওঠা জরুরি. তার জন্য সব কিছু করতে সে উদ্যমী. তাই এবছর তার মূল কাজ, নথি
করণের কাজ সে প্রায় বন্ধ করেছে, শুধু সংগঠণের স্বার্থে.
ব্লগ
সংস্থার বড়তম রোজগারটা আসে buybengalihandicrafts.blogspot.com ব্লগ থেকে, অন্যভাবে বললে বাহলার বেশ কিছু গ্রামশিল্পীর পণ্যশিল্প দ্রব্য
বিক্তি করতে পারে এই ব্লগের মাধ্যমে. এই রোজগার থেকেই দুটি সংস্থার সাংগঠনিক ব্যয়
আর কলাবতী মুদ্রারও নানান ব্যয় সঙ্কুলান করতে হয়. এবছরে একটি বড় অর্ডার আসে
মুম্বইএর পুজো কমিটি থেকে. তারা ব্লগ সূত্রে সংস্থার কাছে জানতে চায় যে মুম্বইএর
একটি পুজো কমিটি তারা ছোএর (ছৌ নয়) মুখোশ দিয়ে সাজাতে চায়. সেই মুখোশ তারা সংস্থার
কাছ থেকেই কিনবে. সেই পরিমান একলাখ টাকারও বেশি.
ইমেল আর ফোনেই সমস্ত কাজ সারা
হয়. বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘের অন্যতম প্রধান নেপাল সূ্ত্রধরকে
এই মুখোশ জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়. মুম্বইএর এই সংস্থাটি কলাবতী মুদ্রাকে বেশ
কিছু অর্থ আগ্রিম করে. পুজোর ঠিক আগে কলাবতী মুদ্রার কনসালট্যান্ট বিশ্বজিত
চক্রবর্তী নিজে ভারতীয় রেলে জিনিসটি বুক করে সেই সংস্থায় মুখোশগুসি পৌঁছে দেন এবং
বাকি অর্থ নিজে নিয়ে আসেন.
এ প্রসঙ্গে একটা কথা না বলে পারা
যাচ্ছে না. কলাবতী মুদ্রা শিল্পীদের শিল্প দ্রব্য বিক্রি করে দিয়ে নির্দিষ্ট
পরিমান অর্থ নিজের খরচের জন্য রেখে দিয়ে লাভের অধিকাংশ অর্থই শিল্পীকে দিয়ে দেয়.
একটি অভিযোগ ওঠে মধ্যসত্বভোগী সম্বন্ধে, যে তারা বাজারের নিয়ম জানে, ক্রেতার
মনোভাব জানে তাই তারা অনেক বেশি দামে সেই শিল্পদ্রব্যগুলো বিক্রি করতে পারে. এবং
এই লভ্যাংশের অধিকাংশ অর্থ আর শিল্পীদের
কাছে ফিরে আসে না. সেটি মধ্যসত্ত্বভোগীরই পকেটস্থ হয়.
কলাবতী মুদ্রা এই অভিযোগ
সম্বন্ধে সচেতন. এই অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রে সত্যও হতে পারে. এ ধরণের ছোটছোট বহু
সামগ্রী বছরভর বিক্রি করে কলাবতী মুদ্রা. কিন্তু কলাবতী মুদ্রা শিল্পীকে জানায় সে
কী দামে জিনিস বিক্রি করছে এবং কত লাভ করছে এবং সে শিল্পীকে লভ্যাংশের কত ফেরত
দিচ্ছে.
দোকান
দুটো দোকানেই কলাবতী মুদ্রার
পণ্য বিক্রি হচ্ছে. তবে ব্লগটির মত নয়. ধীরে ধীরে এই জিনসগুলি বিক্রি হচ্ছে.
বিক্রির পরিমান খুব একটা আশাপ্রদ নয়.
এই দুটি দোকান চালাতে কলাবতী
মুদ্রার অনেকটা হাত বাঁধা. নির্ভর করতে হয় দোকানের বিক্রির পরিকাঠামো আর মালিকের
ইচ্ছের ওপর. ডলিজএর অসুবিধে হল, ডলিও নিজে শিল্পদ্রব্য বিক্রি করে. তাই কলাবতী
মুদ্রার সরাসরি বিক্রির পরিকাঠামো না থাকায় অনেকসময় ডলির ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে
বিক্রি. কলাবতী মুদ্রা অভিজ্ঞতা হল, ডলি সাধারণতঃ নিজের কেনা দ্রব্য বিক্রি করতে
উ্তসাহী, ডলির যে দুটি মেয়ে জিনিস দেখায় তাদেরও গ্রাম শিল্প সম্বন্ধে ধারণা কম. গত
বছরের দোকানে প্রদর্শণীর অভিজ্ঞতার দেখা গিয়েছে সংস্থার কর্মীরা বিক্রির সময় থাকেন
বলেই দ্রব্যগুলোর নানান তত্য ক্রেতাদের দিতে পারেন. এবং সেগুলো অনেক বেশি বিক্রি
হয়. এই কাজটি ডলির দোকানে হচ্ছে না. যা বিক্রি হচ্ছে, তাও নাম মাত্র.
বিনীতার আর্থ কেয়ারেও প্রায়
একই সমস্যা. বিনীতার বই বিক্রি উদ্দেশ্য. বইএর যায়গায় শিল্পদ্রব্য বিক্রি তার
কাম্য নয়. কিন্তু এই দ্রব্যগুলো সাজিয়ে রাখলেও ক্রেতার কাছে দোকানের গ্রহণযোগ্যতাও
বাড়ে. ফলে তার পক্ষে এখুনিই সেই শিল্পদ্রব্যগলো সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় আবার সেগুলো
বহাল তবিয়তে থাকুক সেটাও চাইছে না সে.
যাইহোক এবছরও এই দোকানগুলি
বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কলাবতী মুদ্রা. তবে পরের বছর নতুন করে ঢেলে সাজাতে
হবে তার সম্পদ সংগ্রহের নানান দিক.
বিশেষ করে এই দোকানগুলি
পরোক্ষে আর ব্লগটি প্রত্যক্ষভাবে চালাবার অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় সে বুঝতে পারছে,
তার পরিকল্পনা ঠিক. কিন্তু সম্পদ আর পরিচালনায় কিছুটা খামতি থেকে গিয়েছে.
নিয়মিতভাবে এই দোকানগুলি দেখাশোনা করার কাজে শ্রমশক্তি নিয়োগ করতে হবে, তবেই
গ্রামশিল্পীদের শিল্পকর্মের বিক্রি বাড়তে বাধ্য. যেমন ঘটছে ব্লগে.
নতুন দোকানের ভাবনা
ফলে আগামী দিনে সম্ভব হলে সে
নিজে কয়েকটি দোকান চালাবার পরিকল্পনা করছে, যে দোকান শুধু গ্রাম শিল্পের প্রচার আর
প্রসারের কাজ করবে না. এটি তিনটি বড় কাজ
করবে -
১. গ্রাম অর্থনীতির অন্য সবল
দিক, এবং গ্রাম শিল্পের অঙ্গাঙ্গী বন্ধু প্রাকৃতিক চাষের পণ্য বিক্রির সাহায্য
করবে. গ্রামের কৃষকেরা এমনকী শিল্পীরাও রাসায়নিক সারে চাষ করতে বাধ্য হন. কেনা পরিবেশ
বন্ধু এই কৃষি পণ্য বিক্রি করার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই. সেই কাজ করবে এই বিপণী
২. বাঙলাজোড়া শিল্পীদের
গ্রামগুলি আজও ভ্রমণের উপযুক্ত বলে গণ্য হয় না. সেই গ্রামগুলোতে ভ্রমণের উপযুক্ত
পরিকাঠামো গড়ে তুলে সেগুলি এই দোকান মার্ফত বিক্রি করার ব্যবস্থা হবে.
৩. অভিকর শিল্পীদেরও বাজার
ধরার চেষ্টা হবে এই দোকান থেকে.
এই লক্ষ্য রেখে বাঙলা জোড়া
দোকান করার পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেখে
কলাবতী মুদ্রা এই দুই তৃণমূলস্তরের সংগঠণকে সঙ্গে নিয়ে. দোকানের নাম হবে পরম. এই নামটি
নেওয়া হয়েছ পরম্পরা শব্দটি থেকে. এছাড়াও অসীম বোঝাতে অতীতের ভারতীয়রা পরম শব্দটি ব্যবহার
করতেন.
হাটের পরিকল্পনা -
হাট বসেছে শুক্রবারে
আগামী দিনে বাঙলার হস্ত,
বস্ত্র ও অভিকর শিল্পকে আরও অনেক পথ এগিয়ে নিয়ে যেতে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে
সাপ্তাহিক হাটের ভাবনা শুরু করেছে কলাবতী মুদ্রা. এ নিয়ে সে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন
মহলে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা চালাচ্ছে. আশাকরা যায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই
পরিকল্পনাটি রূপায়িত করতে পারবে সে.
আলোচনা খুবই আশাপ্রদভাবে হচ্ছে. কলকাতা পৌর সংস্থার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ
জনপ্রতিনিধিরা তার এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং পরিকল্পনা রূপায়ণ করত বিশদ
প্রকল্প সমীক্ষা তৈরি করতে কলাবতী মুদ্রাকে জানিয়েছে.
কলাবতী মুদ্রা ঠিক করেছে এই
হাটটির নাম হবে হাট বসেছে শুক্রবারে. এমনকী হাটটি শুক্রবারে না বসলেও এই নামে কলকাতা তথা বাঙলার নানান প্রান্তে
এই হাটটি চলবে. এমনও হতে পারে হাটটি সারা সপ্তাহই বসছে.
পাড়ায় পাড়ায়
হস্তশিল্প মেলা
এবছর করা গেল না. কলাবতী
মুদ্রা আগামী বছর আশাকরছে এই প্রকল্পটি শুরু করতে পারবে. হাভলার হস্ত শিল্পকে
পাড়ায় পাড়ায় নিয়ে চলে যাওয়া. ক্লাব অথবা বহুতল বাড়ির সমবেত কেন্দ্রে সপ্তাহের
শেষ তিনদিন এই হাটটি বসতে পারে. এর সঙ্গে থাকবে দু একটা গান বাজনা এমনকী
নাট্যানুষ্ঠানও.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন