মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১২

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১১-২০১২, Annual Report of Kalaboti Mudra 2011-2012


কলাবতী মুদ্রার বারোমাস্যা
আসর বন্দনা
আপন ঘরের খবর নে না
পালাশির চক্রান্তের পর সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা ধনে, মানে, জ্ঞাণে উত্তমর্ণ থেকে অধমর্ণে পরিণত হল. ১৭৬৩ থেকে যে ফকির-সন্ন্যাসীদের বলিদানে বাঙলায় স্বাধীণতা সংগ্রাম শুরু, সেই স্বাধীণতা সংগ্রামের লড়াইতে কোটি কোটি গ্রামীণ প্রাণ দিয়েছেন, নিজেদের ছুঁড়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ রাজের সেনার সামনে, জেলে গিয়েছেন সমাজের স্বার্থে, সোজা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়েছেন কামান, বন্দুক আর ব্রিটিশ টোটার সামনে, গালপাট্টা ফুলিয়ে, মালকোঁচা মেরে. গ্রামীণেরা অসম যুদ্ধে জয়ী হননি. সেই গ্রামীণদের স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে. অথচ ব্রিটিশ সঙ্গী উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তদের স্মৃতি আজও অমর.
ব্রিটিশদের অনাচারগুলি রোধ হবে, এমন এক আশা জেগেছিল স্বাধীণতার লড়াইতে. যেসব মিথ-মিথ্যা-তত্ব-তথ্য-সংগঠণ তৈরি করেছিল ব্রিটিশ, স্বাধীণতার পর সেগুলি পাল্টাবে এমন ভাবনাও ছিল. সমস্ত ভাবনা ভুল প্রমাণ করে ইওরোপ-আমেরিকার পথে ভারত শাসনের কাজ শুরু হল. ক্ষতি হল গ্রাম ভারতের. ভারতের গ্রামীণদের দর্শণ আর পরিশ্রমে গড়ে উঠেছিল অযুত সামাজিক সম্পদ. প্রযুক্তি, জ্ঞাণের বিকাশ ঘটেছিল কয়েক হাজার বছর ধরে. গ্রামীণেরা দেশ বিকাশের ধারায় স্বীকৃতি পেলেন না. ভেঙে যাওয়া সমাজ, সামাজের নিরাপত্তার অভাবে গ্রামে প্রযুক্তির বিকাশ, গবেষণা বন্ধ হল. গ্রাম গণতন্ত্রের শেকড় উপড়ে পড়ল.
সরকার গ্রামের জন্য প্রচুর প্রকল্প তৈরি করল. কিন্তু শাসক-গ্রামীণদের মধ্যে উত্তমর্ণ-অধমর্ণের সম্পর্কের বদল ঘটল না. কারুশিল্পী সাহায্যের নামে চলছে একচেটিয়া ফাটকা পুঁজির অবাধে ঢোকার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা.  আদতে কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাব্রতী এবং ব্যবসায়ীরা উদ্যমী হয়েছে, তাতে দেশের ব্যবসাসহ নানান পরিকাঠামো লাটে ওঠে উঠুক.
কারু শিল্পীদের প্রচ্ছন্ন উচ্ছেদ প্রকল্পঃ ক্রাফ্টমার্ক
আগামীতে গ্রামশিল্পীরা আর বিনামূল্যে সরকারি মেলায় যায়গা পাবে না. জনগণের অর্থে তৈরি সরকারি হাট চলে যাচ্ছে শিল্প দালাল আর কর্পোরেটদের হাতে. কর্পোরেট স্বেচ্ছাব্রতীরা বড় পুঁজির স্বার্থ দেখছে. গ্রামে ছোট উত্পাদকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে তারা বদ্ধ পরিকর.
এই প্রকল্পে ঘুরিয়ে ব্যবসায়ী  কান ধরার প্রকল্প শুরু করেছে অল ইন্ডিয়া আর্টিজান এন্ড ক্রাফ্টওয়র্কার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন. পেছনে কর্পোরেট স্বেচ্ছাব্রতীরা. গালভরা নাম হয়েছে ক্রাফ্টমার্ক. ফ্যাব ইন্ডিয়ার প্রধান উইলিয়ম বিসল, ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল রতি বিনয় ঝা, দস্তকর  প্রধান লয়লা তয়বজী, আরও অনেকে রয়েছেন. আছেন বিদেশে পড়াশোনা করা যুবা, কর্পোরেটিয় কেষ্টুবিষ্টু আর ব্যবসায়ী দালালেরা. সাহায্য আসছে ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইবে ফাউন্ডেশন, ফ্যাব ইন্ডিয়া, দোরাবজী টাটা ট্রাস্ট, দুর্ণীতিতে ডুবে থাকা রয়েল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ডএরমত কর্পোরেট দাতা থেকে.
ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে ক্রাফ্টমার্ক প্রকল্প. টাকার বিনিময়ে সংঘের মদতে গ্রামশিল্পীদের ভবিষ্যত তৈরি হচ্ছে. সংঘ যেটিকে মনে করবে গ্রাম(লৌকিক)শিল্প, সেটিই একমাত্র, অন্যসব ফ্যালনা. এটি সরকারি প্রকল্প নয়. সামাজিক দায়বদ্ধতাও নেই. অর্থবলে আর ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করা এই সংঘটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকারগুলোকে. গ্রামশিল্পীদের উচ্ছেদ হওয়ার আশংকা বাড়ছে.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন