2010-2011 লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
2010-2011 লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১২

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


(শেষাংশ)
নথিকরণের কাজ
যেহেতু কলাবতী মুদ্রা র অন্যতম সদস্য হতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শোলাশিল্পী গুরু মধুমঙ্গল মালাকার, সেহেতু তাঁরই অনুরোধক্রমে সংস্থা তার জেলায়(দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর) নথিকরণের কাজ করেছে. বেশ কয়েকদিন এই জেলায় কাটিয়ে কলাবতী মুদ্রার নথিকরণ দল এইসবগুলি বিশদে নথি করে. এই দলের অনেকেই যেহেতু ছোটবেলা থেকেই শহুরে পশ্চিমি পড়াশোনায় বেড়ে উঠেছি. পড়ার বইতে লেখা নানান ভুল ধারণা মাথায় ঢুকে রয়েছে আজও, তাকে অনেকটা কাটাতে পেরেছি.
এর আগে জেনেছি শহুরে নান্দনিকতাকে বলে বলে ১০০ গোল দিতে পারে লৌকিক অথবা আদিবাসী সংস্কৃতি এবং এ নিয়ে আজ আর খুব বেশি বিতর্কের যায়গা নেই, যদিনা আলোচক নিজে শহুরে চশমা পরে গ্রাম সংস্কৃতিকে হারাতে বদ্ধপরিকর হয়ে থাকেন. অন্যদিকে লৌকিক অথবা আদিবাসী প্রযুক্তি যে শিল্পবিপ্লবজাত প্রযুক্তিকে পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে জড়িয়েথেকে গাঠনিক জটিলতায় অনায়াসে পাল্লা দিতে পারে, তার উদাহরণ আমরা পেয়েছি এই নথি করণ থেকে. এর জন্য আমরা, কলাবতী মুদ্রার সকলে মধুমঙ্গল মালাকারের কাছে কৃতজ্ঞ.
কৃতজ্ঞ এই কারনে যে তিনি আমাদের নতুন এক বিশ্ব, নতুন সংস্কৃতির সন্ধান দিয়েছেন. যদিও এর আগে আমরা এক বছরে এর থেকে বেশি নথিকরণের কাজ করেছি. কিন্তু তাঁর হাত ধরার পরই আমরা একটি সাংস্কৃতিক এলাকায় এতসব জটিল প্রযুক্তির ধারণা পেয়েছি, জটিল সংস্কৃতির রূপরেখার উদাহরণ পেয়েছি.
বিশেষ করে চদর বদর. আমাদের ধারণা ছিল, বাঙলায় আর চদরবদরের অস্তিত্ব নেই. যা রয়েছে সবই দুমকায়. শান্তিনিকেতনে যে চদরবদরটিকে দেখানো হয়েছে, সেটি কিন্তু দপমকা থেকে আনা. সংগ্রাহক, রবিকান্ত চতুর্বেদী এই তথ্য জানিয়েছেন. একমাত্র মধুমঙ্গল মালাকারই এই তথ্য যোগান দিয়েছেন আমাদের.
চদরবদর
বাঙলায় প্রায় মৃত এই সুপ্রাচীণ অথচ এক্কেবারে আলোচনা না হওয়া নতুন ধরণের সাঁতালি পুতুল নাচ চদর বদর. বাঙলার সাঁওতাল সমাজ এই পুতুল নৃত্যটি ভুলে গিয়েছে. একমাত্র দিনাজপুরের ডমন মুর্মু এই সংস্কৃতিটি আজও ধরে রয়েছেন.
পশ্চিমি প্রভাবে আমরা আজ বিশ্বাস করে করে নিয়েছি, আদিবাসী সংস্কৃতি এবং আদিবাসী প্রযুক্তি নাকী সব খুবই সরল ও সোজা. কিন্তু চদরবদর সব্বাইকে ভুল প্রমাণ করবে. আদতে ইওরোপ ভারত তথা ভারতের সংস্কৃতিকে ওপর ওপর থেকে দেখে যা প্রমাণ করার চেষ্টা কদরেছে, স্বাধীণতার আগে থেকেই আমরা মধ্যবিত্তরা সেই তালে তাল দেওয়ার চেষ্টা করছি. বিশেষ করে বিদ্যাসাগর, রামমোহন সর্বোপরি মেকলে প্রবর্তিত পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শিশুকাল থেকে বেড়ে ওঠায় ভারত সম্বন্ধে শহুরে ভারতীয়দের সম্বন্ধে খুবই ভুল ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামবাঙলা সম্বন্ধে. তাই ছোটবেলা থেকেই শহুরে ভারতীয়রা এমন এক ধারণা গড়ে ওঠে যার সঙ্গে ভারতীয় জীবনধারণের বাস্তবতার কোনও মিল নেই.
এই চদরবদরের বিশদ বিবরণ এবং কর্মশালার অভিজ্ঞতা আমরা বিশদে বলেছি লোকফোক ব্লগে. শুধু একটি কথা আমরা বলতে চাই, ভারতের আদিবাসী এবং লোক সমাজ নিয়ে যে ধারণার প্রচার বড় শিল্পনির্ভর সভ্যতা বিগত ৩০০ বছর ধরে করে এসেছে তার অধিকাংশ আসূয়াভিত্তিক এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ. নিজের অক্ষমতা এবং অযোগ্যতায় ঘোমটা পরাতে শহুরে সমাজতত্ব আর নৃতত্বের বিকাশ ঘটেছে.
গমীরা নাচ
দিনাজপুরের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক প্রকাশভঙ্গী গমীরা মুখোশ নাচ. বহু গ্রামসংস্কৃতি কর্মীও গমীরা আর গম্ভীরার মধ্যে পার্থক্যটি আজও গুলিয়ে ফেলেন. গম্ভীরা মূলতঃ মালদা এলাকার. শিবের অপর নাম গম্ভীর. এবং যে কোনও সামাজিক ক্রিয়া কর্মের মধ্যে অসঙ্গতি দর্শণে শিবকে সাক্ষী খাড়া করে তাকে অভিযোগ জানানো হয়, শিব হে অথবা নানা হে ডাক দিয়ে.
অন্যদিকে পাশের জেলা দিনাজপুরে গমীরা অন্যতম প্রধাণ সংস্কৃতি. বিষয়বস্তু অথবা প্রকাশভঙ্গীতে এই দুই প্রতিবেশী জেলার দুই অভিকর শিল্পে বিন্দুমাত্র সাজুজ্য নেই. দুটি দুই রকম. দুটি দু ধরণের প্রতকাশভঙ্গীর. গমীরা যেমন শিবকে নানারূপে সম্বোধন করে থাকে, অন্যদিকে গমীরা আরাধণা করে  দেবী দুর্গার. দুর্গাকে আরাধণা করে সে. দুর্গার রীপ বর্ণনাই তার মুখ্য কাজ. অসুর দলনী, দশপ্রহরণ ধারিনীকে সে পুজন করে.
গমীরা নাচের অন্যতম উপকরণ মুখোশ. এই মুখোশ দিনাজপুরের দুই জেলার নানান আচারে ব্যবহৃত হয়. এই মুখেশ পরেই নানান শিল্পী নানান চরিত্রের রূপ ধারণ করেন. এ প্রসঙ্গে বলা যাক, এই নাটকে বলা ভাল নাচে শারীরিক সক্ষমতা এক বড় ভূমিকা পালন করে. এক চরিত্রের যখন ভর হয় তখন তার নানান কসরত দর্শকদের মোহিক করে দেয়.
আমরা যেন মনেরাখি এই সাংস্কৃতিক প্রকাশভঙ্গীটিতে রাজবংশী সমাজের মানুষই অংশগ্রহণ করেন. এই সমাজের দেশি পলিয়া, এই দুই গোষ্ঠীই এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করে থাকেন. সাধারণতঃ শীতকালেই এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে.
এবং এর থেকেও কলাবতী মুদ্রার দলের কাছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে এই নথিকরণের কাজে. এই প্রায় প্রথাভাঙা জটিল নৃত্য-নাট্য ভঙ্গীমা থেকে শহরের সংস্কৃতিকে অনেক কিছু নেওয়ার আছে সে কথা নতুনভাবে এই নথিকরণের কাজ অন্ততঃ আমাদের  কলাবতী মুদ্রা সদস্যদের খুব জোরের সঙ্গে আরও একবার মনে করিয়ে দিল.
নথিকরণের পর আমরা জানলাম, শোলাশাল্পী মধুমঙ্গল মালাকারমশাই যাঁর হাত ধরে কলাবতী মুদ্রা এই নথিকরণের কাজটি করতে দিনাজপুর গিয়েছিল, নিজে সেই সংস্কৃতির এক বড় অংশ. এক সময় নিজে রাজবংশী সংস্কৃতির খন এবং গম্ভীরা নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন, একথা আমরা শুনলাম দলের কুশীলবদের মুখে.
এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যে ছবিগুলো দেওয়া গেল, সেগুলি কলকাতারসায়েন্স সিটিতে আন্তর্জাতিক লোক উত্সবে দলটির অনুষ্ঠান. দল প্রধান বদ্রীনাথ বসাকের নেতৃত্বে এই দলটি নথিকরণের কাজে অংশগ্রহণ করেন, তেমনি এই দলটিও সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেন. এই অনুষ্ঠানে যেসব শিল্পী অংশগ্রহণ করেন তাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হল-
১. মনেরঞ্জন সরকার, ২. কাঞ্চন সরকার, ৩. কৈলাস সরকার, ৪. সোমেন সরকার, ৬. ভদরু সরকার, ৭. মলিন সরকার, ৮. পবিত্র সরকার, ৯. কলেন সরকার, ১০. শ্যামা সরকার, ১১. বদ্রীনাথ বসাক
জনরা
জনরা আদতে আদিবাসী রাজবংশী গয়না এ তথ্য কলাবতী মুদ্রা বেশ কয়েক দশক আগে থেকে জানত. কিন্তু মটরু দেবশর্মার খোঁজ পাওয়া গেল মধুমঙ্গল মালাকারের যোগ্যতায়. অনুবিধে হল, এই কর্মশালা আয়োজন করতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন. কেননা জনরা মূলতঃ রূপোর গয়না.
প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের সাক্ষীতে জানা যাচ্ছে অন্ততঃ তিন-চাক দশক আগেও রাজবংশী সমাজে জনরার ভূমিকা ছিল অতীব সাধারণী. খুব সাধারণ ঘরের মহিলারা জনরা পরে ঘুরতেন. আজও কলাবতী মুদ্রা দিনাজপুর জেলার অনেকটা গ্রামের ভেতর দিকে, বিশেষ করে খুনিয়াডাঙি, কুশমন্ডি, বালুরঘাট, দুর্গাপুর, বড়গ্রাম, ঊষাহরণ এই সব এলাকায় যায় সেখানে অনেক পুরোনো পরিবারের মহিলারা আজও জনরা পরেন.
যখন আমরা মধুমঙ্গল মালাকারের সুযোগ্য উপস্থাপনায় জনরার কর্মশালার আয়োজন করি, তখনও জানিনা যে এই কর্মশালা পরিচালনা করতে রূপো নিদেনপক্ষে পিতল অথবা অন্য ধাতু পাওয়া বেশ কঠিন কাজ. ফলে এই বছর আমরা এই কর্মশালা আয়োজন না করতে পারলেও আগামী বছরগুলোতে সময় বের করতে পারলে এই কর্মশালা আয়োজন করতে পারি এমন এক প্রতিশ্রুতি আমরা নিজেদের দিয়েছি.
প্রশিক্ষণ শিবির
শীতলপাটি
কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে প্রদীপ দের বাড়িতে কলাবতী মুদ্রা তাঁরই অনুরোধে একটি শীতলপাটি থেকে নানান ব্যবহার্য দ্রব্য প্রস্তুত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে. শিবির পরিচালনা করেন এনআইএফডির স্নাতক সুদেবী কর.
এ ছাড়াও রাভা তাঁত আর বুনন, দিনাজপুর মুখোশ, নক্সালবাড়ির কাঠের কাজ, খন নাটক ইত্যাদি বিষয়ে সমীক্ষা ও কয়েকটি এলাকায় কর্মশালা আয়োজন হয়.
প্রতিবন্ধী সচেতনতা কর্মশালা
কলাবতী মুদ্রার উদ্যোগে দুই দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী সৌরভ বসু এবং সমীর ঘোষাল বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের নানান বিষয় নিয়ে বিশদ কর্মশালা আয়োজন করে. নদিয়ার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তারা এই কাজগুলি করে. এ নিয়ে বিশদ বিবরণ কলাবতী মুদ্রার ব্লগে পাওয়া যাবে.

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


(পঞ্চমাংশ)
চিত্রসীমান্তঃ অসম-বাঙলা চিত্রকলা শিবির এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বিশদ পরিকল্পনা                                                         আমন্ত্রণ পত্র
পুজো শেষ হতে না হতেই আসম ভবন থেকে কলাবতী  মুদ্রা দপ্তরে খবর আসে অসম সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ১৫০ বছর উপলক্ষ্যে কলকাতায় একটি চিত্র শিবির করতে ইচ্ছুক. আসম ভবন চায় কলাবতী মুদ্রা এই কাজটি করুক.  কলাবতী মুদ্রা এবাবদে রাজ্য সংগীত আকাদেমিকে সঙ্গী করতে অনুরোধ করে. অসম ভবনের অনুরোধে সেও এই কাজে সঙ্গী হয়.
হেলির সময় মার্চ মাসের শেষের দিকে পাঁচদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে  অনুষ্ঠিত হয়. এই অনুষ্ঠানে অসমের চিত্র শিক্ষার্থীরা এবং কলকাতার চিত্র শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করে. কলাবতী মুদ্রা উদ্যোগে একই সঙ্গে পট চিত্র নিয়ে একটি কর্মশালা এবং আলপনা নিয়েও একটি কর্মশালা আয়োজিত হয়. মণিমালা চিত্রকর এবং রবি বিশ্বাস এই দুটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন.
এই কর্মশালা উদ্বোধন হয় কলাবতী মুদ্রার শিল্পীদের নৃত্যের মাধ্যমে. প্রখ্যাত চিত্রকর ওয়াসিম কাপুর এই কর্মশালা উদ্বোধন করেন.  কর্মশালার অন্যতম আকর্ষণ ছিল চা-চক্র. এই অনুষ্ঠানে নানান প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব চা বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন.
কলাবতী মুদ্রা ছাড়াও অসমের একটি নাট্য দল অসমীয়ায় রক্তকরবী উপস্থাপন করে. অসম ভবনের কর্মীরা বিহু নাচ প্রদর্শণ করে.
কলাবতী মুদ্রা নৃত্য গুরুকুল
কলাবতী মুদ্রা প্রতিবছরের মতই এ বছরও তার নৃত্য গুরুকুলে প্রায় ৫০ জনেরও বেশি শিল্পী সারা বছর ধরে শিক্ষা গ্রহণ করেন. কলাবতী মুদ্রা প্রধান ড. ললিতা ঘোষ ছাড়াও অনেক শিল্পী এই গুরুকুলে তাঁদের অধীত বিদ্যা উজাড় করে দেন.
এ বছর গণিপুর শীতলা হাইস্কুলে কলাবতী মুদ্রা তার বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়. এর একটি বড় কারন অর্থাভাব.
এবছর পুজোয় কলাবতী মুদ্রা দিল্লিতে অনুষ্ঠান করতে পারেন নি তার বড় কারন কলাবতী মুদ্রা যে সব মন্ডপ বানিয়েছে, সেখানে তার শিল্পীরা প্রদর্শণ করেছেন. এই প্রথম কলকাতার মন্ডপে থিমের সঙ্গে ভাবনা অনুযায়ী অভিকর শিল্প প্রদর্শণেরও সুযোগ রাখা হয়েছে. ড. ললিতা ঘোষের নেতৃত্বে কলাবতী মুদ্রার সদস্যরা পুজো প্যান্ডেলগুলিতে নৃত্য প্রদর্শণকরেন.
২০১০-১১এর বছরটিতে কলাবতী মুদ্রা শিল্পীরা অন্য যেসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন
অসম বাঙলা উত্সব, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, অসম ভবন, কলাবতী মুদ্রা, ১৭.৩.২০১১ - ২০.৩.২০১১
যাজপুর জেলা মহোতসব, ওড়িশা
যতীনদাস নগর স্পোর্টিং ক্লাব, বেলঘরিয়া, বৈশাখী উত্সব
শংকরদেব তিথি উত্সব, অসম ভাবন, কলকাতা
আলিদা স্কুল, বারুইপুর ধানুয়া
ভাষা ও চেতনা সমিতি - ১ বৈশাখ
জাগৃহি ক্লাব
দুর্গোত্সব, চতুর্থী থেকে দশমী
রামগড় রায়পুর ক্লাব, গড়িয়া
ঠাকুরপুকুর ক্লাব, ঠাকুরপুকুর
আপনালয়, মধ্যমগ্রাম
নর্থ ইস্ট ট্রেড এক্সপো, সন্টলেক
নিভা আনন্দ বিদ্যালয়,
সুন্দরবন লোক সংস্কৃতি উত্সব, জয়গোপালপুর গ্রামবিকাশ কেন্দ্র, বাসন্তী
সাঁওতাল সংস্কৃতি নথিকরণ কর্মশালা
দুঃখের খবর. এ বছর গুরু বাজার হেমব্রম তার দেহ ছেড়েছেন. তাই এই কাজটি আপাততঃ বন্ধ রাখা হল. এর পর শুযোগ ঘটলে, সুযোগ্য গুরু পাওয়া গেলে, যিনি বাজার হেমব্রমএর মত ধৈর্য ধরে কাজটি শেখাতে পারবেন তাহলেই সেই আরব্ধ কাজটি নতুন করে শুরু করা যেতে পারে.
কলাবতী মুদ্রার সদস্যদের পক্ষে বাজার হেমব্রম এবং তাঁর পরিবারকে জানাই অপরিসীম শ্রদ্ধা আর ভালবাসা.
কারুশিল্পী সদস্যপদ
বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘকে কলাবতী মুদ্রা হস্ত, বস্ত্র এবং অভিকর শিল্পীদের সংগঠিত করতে সাহায্য করছে. আগামী বছরে এই সংগঠণটিকে সে সরকারি দপ্তরে পঞ্জীকরণ করতে সাহায্য  করবে যাতে সে জেলায় জেলায় সংগঠণ গড়ে তুলতে পারে.
তবুও  কলাবতী মুদ্রা  এই বছর থেকে নতুন এক সীমিত সংখ্যক গ্রাম শিল্পীদের সদস্য করকে উদ্যোগী হয়েছে. যে সব এলাকায় সে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং নথিকরণের কাজ করেছে, সে সব এলাকার শিল্পীদের সে সদস্যপদ দান করেছে. এবং যে হেতু কলাবতী মুদ্রা কোনও সংগঠিত দান গ্রহণ করে না, সে হিতু বহু শিল্পী উদ্যমী হয়ে এই সংগঠণে চাঁদা দিয়েছেন.
আমরা কলাবতী মুদ্রার সদস্যরা কৃতজ্ঞ, যে গ্রাম শিল্পীদের জ্ঞাণ নথিকরণের কাজ করছি, সেই শিল্পীরাই এই সংগঠণের বাঁচার কথা ভাবছেন. এবং এই বছর থেকেই সে সীমিতাকারে এই চাঁদা তুলছে. 

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


(চতুর্থ অংশ)
পারম্পরিক জ্ঞাণ নথিকরণ উদ্যম
সংগঠণ উদ্যম - বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘ
পুজোয় দুটি মন্ডপ, প্রদর্শণী আর দোকানে শিল্পকর্ম রাখার পর আবারো নতুন করে কলাবতী মুদ্রার সঙ্গে বাঙলার শিল্পীদের সংযোগ বাড়তে শুরু করে. বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শোলা শিল্পী দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকার বাঙলার শিল্পীদের একজোট করার আহ্বান জানান.
এই কাজে দুটি দিন মধুমঙ্গল মালাকার এবং শিল্পী বন্ধু বিশ্বজিত চক্রবর্তী কলাবতী মুদ্রার সদস্যদের সঙ্গে একটি দীর্ঘ আলোচনা আয়োজন করেন, যেখানে বাঙলার গ্রামীণ শিল্পীদের নানান সুবিধে অসুবিধে নানান বিষয় আলোচনা হয়. এই আলোচনায় মধুমঙ্গল কলাবতী মুদ্রাকে এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান. কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে বিনীতভাবে মধুমঙ্গলকে বলা হয়, দুটি কারনে কলাবতী মুদ্রা এই দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম, প্রথমতঃ কলাবতী মুদ্রার সংবিধানে এই সুযোগ রাখা হয় নি. যদিওবা সে করতে পারে, সে খুব সীমিতভাবে করতে উত্সুক. আর নৈতিকভাবে কলাবতী মুদ্রা ব্যাপক এই কাজ করতে চায় না. তার কাজ জ্ঞাণ নথিকরণ. সংগঠণ নয়.
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে লৌকিক বাঙলার জন্য কাজ করা শহুরে সংগঠণগুলি সুদূর অতীত থেকেই তাদের সুবিধেমত গ্রাম বাঙলার শিল্পীদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আসছে. এতে সংগঠণ অথবা কয়েকজন শহরমুখী শিল্পীর কাজের সুযোগ বাড়লেও সামগ্রিকভাবে বাঙলার শিল্পীদের বিন্দুমাত্র উপকার হয় নি. সংগঠণের  প্রধাণ, সদস্যরা সরকার থেকে সামাজিক কাজ করার নামে বহু সুযোগ, অর্থ, সম্মান পেয়েছেন, বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বিনা বাধায়, কিন্তু বেচার গ্রামশিল্পী যে তিমিরেই ছিলেন, সেই তিমিরে আজও পড় রয়েছেন. এই দুটি কারনের জন্য সরাসরি কলাবতী মুদ্রার পক্ষে শিল্পীদের নিয়ে সংগঠণ করা সম্ভব নয়. প্রয়োজনে সে শিল্পীদের নানান উদ্যমকে সাহায্য করতে পারে.
এই আলোচনা সভায় কলাবতী মুদ্রার পক্ষ বলা হয় যে বাঙলায় আদতে পারম্পরিক লৌকিক আর আদিবাসী শিল্পীদের সংগঠণের অস্তিত্ব নেই. গ্রাম শিল্পীদের নামে যে সব সংগঠণ চলে তার অধিকাংশই গ্রাম শিল্পীদের জন্য কাজ করার সংগঠণ. সেখানে গ্রামশিল্পীদের ইচ্ছা অনিচ্ছা গৌণ, শহরের কিছু মানুষের ভাবনা-চিন্তাই প্রাধাণ্য পায়. সেই জন্যই বিভিন্ন গ্রামশিল্পীদের নিয়ে কাজ করার সংগঠণের  অভাব নেই. অভাব শিল্পীদের কাজ করার সংগঠণ, যেখানে শিল্পীদের ইচ্ছে অনিচ্ছে প্রাধান্য পাবে.
কলাবতী মুদ্রা যেহেতু বহুদিন ধরেই গ্রামবাঙলার শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করছে, সেহেতু এ ধরণের সংগঠণ গড়ে তুলতে শিল্পীদের বহুদিন ধরে উত্সাহ দিয়ে আসছে. গ্রাম শিল্পীরা যদি এ ধরণের সংগঠণ গড়ে  তোলেন, তাহলে কলাবতী মুদ্রা তার সমস্ত উদ্যম সংহত করে, তার সমস্ত অভিজ্ঞতা জড়ো করে শিল্পীদের,সংগঠণকে সদর্থক করতে তুলতে সাহায্য করবে. কর্মশালায় তাঁর অতীত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন মধুমঙ্গল মালাকার. তিনি এ বিষয়ে কলাবতী মুদ্রাকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন.
এই কর্মশালায় কলাবতী মুদ্রা বিনীতভাবে মধুমঙ্গল মালাকারকে জানায় শিল্পীদের দ্বারা, শিল্পীদের পরিচালিত যে কোনও সংগঠণকে সমর্থণ করতে কোনও বাধা নেই. এধরণের কোনও উদ্যম নৈতিকভাবে কলাবতী মুদ্রা পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব যেহেতু, এই ধরণের গণ সংগঠণ তৈরি করতে সে অনিচ্ছুক.
আবারও কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতি খ্যাতি সম্পন্ন শোলা শিল্পী দিনাজপুরের মধুমঙ্গল মালাকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করা হয়. বলা হয় তিনি যদি এই সংগঠণের দায়িত্ব নিতে পারেন তাহলে কলবতী মুদ্রা তার সমস্ত যোগাযোগ উদ্যম এর পেছনে ব্যয় করবে.
মধুমঙ্গল নৈতিকভাবে রাজি হয়েও আরও কিছুটা সময় চান. তিনি বলেন, তাঁকে তাঁর পুরোনো সাথীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে. তাঁদের মতামত তার অত্যন্ত প্রয়োজন. এই কর্মশালায় ঠিক হয়, তিনি একমাস সময় নিচ্ছেন. এই একমাস বাদে আবার তিনি কলাবতী মুদ্রার সঙ্গে একত্র হবেন. বৈঠকে যোগদান করার জন্য শিল্পী মধুমঙ্গল এবং তাঁর সাথীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সেদিনেরমত সেই বৈঠকটি ইতি টানা হয়.
ঠিক একমাস বাদে নতুন করে আবার আলোচনা শুরু হয়. মধুমঙ্গল জানান তিনি শিল্পীদের দুর্দশায় ব্যথিত. তিনি নিজে একটি চাদোকান করে সংসার ব্যয় নির্বাহ করেন. অথচ তাঁর বিদেশে যতটুকু যোগাযোগ, প্রায় ১২ বার তিনি বিদেশ গিয়েছেন, সবই শোলাশিল্পী হিসেবে. তিনি আগামী দুবছর ধরে নতুন সংগঠণ গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর. তার জন্য শারীরিক পরিশ্রম তিনি দেবেন. কিন্তু কলাবতী মুদ্রাকে অন্য সমস্ত কাজগুলি, যেমন আইনি ঝঞ্ঝাট, লেখালিখি ইত্যাদি করতে হবে. তবেই তিনি এগোবেন.
মধুমঙ্গলের প্রস্তাব সর্বান্তকরণো সমর্থন জানানো হয়. কলাবতী মুদ্রা পক্ষ থেকে মধুমঙ্গলকে অছি সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়. মধুমঙ্গলকে জানানো হয়, বিধান বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য অছিপরিষদে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন. সেখানে তাঁকে এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ নিবেদিতা দাস রায়কে নিয়ে আসার কথা ভাবছে কলাবতী মুদ্রা. সেই বৈঠকেই মধুমঙ্গল মালাকার তাঁর সম্মতি দেন.  তাকে জানানো হয় আগামী বছরে তাঁকে কলাবতী মুদ্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে. এবং সেই সময়ই অন্য দুটি সংগঠণ নথিভুক্ত করা হবে.
তিনি জানান এই দুটি সংগঠণ তৈরি করতে কলাবতী মুদ্রা বিশদে পরিকল্পনা করুক. সেই পরিকল্পনায় তিনি তাঁর মতামত দেবেন. এবং তার পরেই দল গড়ে উঠতে যা যা করণীয় সব পরিকল্পনা হবে যৌথভাবে. বিশ্বেন্দু নন্দ সবার সঙ্গে কথা বলে সরকারি আইন মোতাবেক নথি করণের কাগজপত্র তৈরি করে এবং দুটি সংগঠণ তৈরির পরিকল্পনা হয়.
নথিকরণের আগে সেই বার্তা জেলায় জেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন মধুমঙ্গল. উদ্দেশ্যে শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় এবং এই প্রস্তাব জানানো. যৌথভাবে একটি উত্তরবঙ্গ পরিভ্রমণের পরিকল্পনা করা হয়. মধুমঙ্গল মালাকার, বিশ্বজিত চক্রবর্তী এবং কলাবতী মুদ্রা পক্ষে বিশ্বেন্দু নন্দ এই উদ্দেশ্য বেশ কয়েকবার সমগ্র উত্তরবঙ্গসহ নানান জেলা পরিভ্রমণ করেন.
প্রাথমিকভাবে হাতেগোণা শিল্পী  এই উদ্দেশ্য বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন. বলেন তাঁদের এবাবদে অভিজ্ঞতা বেশ খারাপ. সংস্থা আগে তৈরি হোক তার পর তাঁরা ভেবে দেখবেন সংস্থার কাজে যোগ দেবেন কী না. বলা দরকার এই কথা বলা অধিকাংশ মানুষই কিন্তু পরের দিকে সংগঠণের নানান কাজে অতি আগ্রহে অংশগ্রহণ করেন. তবে বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত শিল্পী কিন্তু সরাসরি এই সংগঠণে যোগ দিতে অস্বীকার করেন. কেননা তাঁরা কলকাতাভিত্তিক অন্য সংগঠণের সঙ্গে যুক্ত.
তবে বিভিন্ন জেলার নানান কারিগর, নানান বস্ত্র শিল্পী, নানান অভিকর শিল্পী এই সংগঠণ গড়ে ওঠার আগেই সর্বান্তকরণে  এই উদ্যমে সাড়া দিয়ে পাশে এসে দাঁড়ান এবং নানান ভাবেক এই সংগঠণের সুস্থিরতা কামনা করেন. সংগঠক মধুমঙ্গলের পরামর্শে আন্তর্জাতিক শিল্পী শিল্পগুরু নেপাল সূত্রধরও এই সংগঠণে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন.
পশ্চিমবঙ্গ পরিভ্রমণের পর আবার একটি বড় বৈঠক আহ্বান করা হয়. সেই বৈঠকে দুটি সংগঠণের নাম ঠিক হয়. ঠিক হয় একটির নাম হবে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘ এবং অন্যটি বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘ. অছি পরিষদ গঠণ হয়. ঠিক হয় দুটি সংগঠণেরই শীর্ষে অবস্থান করবেন দুই আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা শিল্পী যৌথভাবে মধুমঙ্গল মালাকার এবং নেপাল সূত্রধর. এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিল্পীবন্ধু ও শিল্পী এই সংগঠণে যোগদান করেন.
ঠিক হয় পঞ্জীকরণ হবে ২০১১র জুন মাসে. সেই উদ্দেশ্যে আরও কএকবার সংগঠণের নানান বিষয় আলোচনা করতে বৈঠক হবে ঠিক হয়. এও ঠিক হয়, সংগঠণের প্রাথমিক দপ্তর হবে কলাবতী মুদ্রার দপ্তরে. উত্তরবঙ্গের দপ্তর হবে মধুমঙ্গল মালাকারের বাড়ি, মুস্কিপুর, বড়গ্রামে.
পুজো শেষ করেই ডলিজএ প্রদর্শণী এবং দুটি দোকানে পণ্য পৌছেঁদেওয়া এবং তার পরেই নতুন দুটি সংগঠণের উদ্যোগ নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করতেই বছরের বাকি সময় অতিবাহিত হয়ে যায়. কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞ মধুমঙ্গল মালাকারের মত শিল্পী সংগঠণের কাজে নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছেন. কলাবতী মুদ্রা তাঁকে তাঁর সংগঠণ যাত্রায় সব ধরণের সাহায্য করবে.
কলাবতী মুদ্রার পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কাজ করা বিশ্বেন্দু নন্দকে এই সংগঠণ গড়ে তুলতে তাঁকে সাহায্য করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে. আগামী বাঙলার গ্রামীণ শিল্পীরা বছরে নতুন করে এই সংগঠণ গড়ে তুলতে চলেছেন, তাঁদের কাজে কলাবতী মুদ্রা যদি সহায়কের কাজ করতে পারেন তাহলে তাঁদের জীবনে তাঁরা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এমন দাবি তাঁরা করতেই পারেন.


কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


লেক উদ্যম
লেক প্রদর্শণীর জ্ঞাপণী          আমন্ত্রণপত্র
এই প্রথম কলকাতায় পার্ক স্টিট অঞ্চলে লৌকিক বাঙলার একটি শিল্পপ্রদর্শণী হয় ডলিজ কালেকশনএ. কলাবতী মুদ্রার সঙ্গে হাত মেলায় কবি জয়া মিত্রর লোকনদী ট্রাস্ট, বিক্রম মিত্রর সংস্থা আর্থ ক্রাফ্ট. বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই প্রদর্শণীটির বহু প্রশংসা প্রকাশিতও হয়. বাঙলার বিভিন্ন এলাকার নানান ধরণের পারম্পরিক লৌকিক দ্রব্যের সম্ভার প্রদর্শিত হয় এই প্রদর্শণীতে. দক্ষিণবঙ্গের পুতুল থেকে উত্তরবঙ্গের দর্জিলিংএর মুখোশ প্রদর্শিত হয় এই প্রদর্শণীতে.
এই প্রদর্শণের পরই ডলিজএ কলাবতী মুদ্রার শিল্পীরা তাঁদের নানান প্রদর্শণ সামগ্রী প্রদর্শণ করতে শুরু করেন.

ব্লগ এবং ওয়েবসাইট
কলাবতী মুদ্রা প্রকাশিত দুটি ব্লগ lokfolk.blogspot.com, ছাড়াও এবছর একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে. সেই সাইটটির নাম দেওয়া হয় lokfolk.org. তবে আজও এই ওয়েবসাইটে কত মানুয আসছেন, কী পড়ছেন সেই তথ্য কলাবতী মুদ্রা সংগ্রহ করে উঠতে পারেন নি. এই তথ্য ব্লগে সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব. এবং আমরা জানি সারা বিশ্ব থেকে লোকফোক ব্লগটিতে রেজ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন পাঠক ঢোকেন এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন.  কোনও কোনও ব্লগ হয়ত এর থেকেও বেশি মানুষ দেখেন. কিন্তু লোকফোকেরমত নির্দিষ্ট তথ্য প্রদানকারী এই ব্লগটিতে এত পরিমাণ মানুষের প্রবেশ প্রমাণ করে বাঙলার লৌকিক জীবন নিয়ে সারা বিশ্বের আগ্র রয়েছে প্রচুর, কিন্তু সে পরিমান তথ্য নেই. একমা কলাবতী মুদ্রাই সেই সেবা দেওয়ার কাজটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে করে চলেছে.
আদতে বাংলায় গ্রাম বাঙলার জ্ঞাণ ভান্ডার নিয়ে কাজকর্ম শহুরে মানুষেরা খুবই কম করেছেন. তবুও অতীত থেকে বহু গবেষক লেখক কৃতবিদ্য বাঙালি এই বিষয় নিয়ে নানান অনুসন্ধানমূলক প্রবন্ধ রচনা করে চলেছেন.
কিন্তু দুঃখের কথা ওয়েবস্পেসে লৌকিক ও আদিবাসী পশ্চিমবাংলা  নিয়ে খুব একটা বিশদ কাজ নেই বললেই চলে. বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যে সব লেখা পাওয়া যায় তা নিয়ে শিশুপর্যায়ের রচনা লেখা গেলেও বাঙলার সাধারণে অসাধারণ লৌকিক জীবন নিয়ে গবেষক অথবা অবাঙালির ধারণা তৈরি করা খুব মুশকিল. তাই এই ক্লব আর ওয়েব সাইটটি কোনও গবেষকের প্রাথমিক জ্ঞাণ তৈরি করতে অথবা রচনা তৈরি করতে সহায়ক হয়ে উঠছে. বাঙলা তথা ভারতের এমনকী বিদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গবেষকেরা সরাসরি কলাবতী মুদ্রায় ফোন করে অথবা ইমেল পাঠিয়ে তাদের চাহিদা সমূহ প্রকাশ করছেন. কলাবতী মুদ্রা এই সমস্ত চেষ্টাগুলোকে সদর্থকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছে.
প্রথম ব্লগটি lokfolk.blogspot.comতে কলাবতী মুদ্রার লোকজ্ঞাণ বিষয়ক পঞ্জীকৃত নানান নথি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই গবেষক, উত্সুকচিত্তদের এই ব্লগ এবং ওয়েবসাইটির দিকে নজর পড়ে. বহু গবেষক এবং লেখক এই ব্লগ থেকে তাদের রসদ সংগ্রহ করা শুরু করেন. অনেকে নানান ভুল তথ্যও ধরিয়ে দিতে শুরু করেন. এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক মন্তব্য তুলে দেওয়া গেল.
I like the valuable information you provide in your articles. I'll bookmark your blog and check again here frequently. I'm quite sure I'll learn many new stuff right here! Good luck for the next! Also see my page > local searh engine The Great Shyllet - Bangla outside bangla
Every weekend i used to visit this website, because i wish for enjoyment, as this this site conations genuinely good funny information too. My website :: bangla kobita The Great Shyllet - Bangla outside bangla
Very nicely written. Please try and put some pictures too, and you can also give credit to the photographer and put it in the blog. very informative piece... keep it upJamdani & Tangail Saree
ere can I find the 19th century text, the Jahuranama? Abdur Rahim? thanks in advance Lady of the legend - bonbibi
ere can I find the 19th century text, the Jahuranama? Abdur Rahim? thanks in advance Lady of the legend - bonbibi
Hi, I am Rajeev kumar Tanti from Nirsa,Dhanbad of 23 years old. I done engineering with mech. engg. Now I am looking for job. I am interested for more good friend. My email id : rajeevkumarten@gmail.com Tanti/TheWeavers
According to this post, balahari's have some connection with the Vaishnavs. But this is not true. Balahari's believe that Hariram (or Balaram Hari) was not reincarnation of any Hindu God but he was born in Divyayuga (prior to Satyayuga) and all Hindu Gods are reincarnation of Hariram. More on Balaharis can be found in the book by Sudhir Chakraborty. Balahari
Apnar songe dekha korte chai. Kivabe korbo? Kakhon? Manas Basu  9831236797Chadar Badar - a unique santhali puppet show
osadharon . apni onek onek help korlen amay . ami mangalr durgotsav ebong durga murtir shilp somporke otyonto agrohi . onek notun kichu janlam shiklam . godbless .Chalchitra and its technology
thanx for the post..it really gives good insight to understand HO culture and little bit of HO history. however, i think there is one mistake. badahatnabeda comes under KUSUMI BLOCk. there is no such block called kashmir in mayurbhanj. regards laxmidhar sarat, mayurbhanj.. Rituals And Festivals Of The Ho Tribe.
এ ছাড়াও মাসে প্রায় একটা দুটো করে ইমেল আসে তাদের গবেষণা অথবা ক্ষেত্র সমীক্ষায় সাহায্য করার জন্য. কলাবতী মুদ্রা তার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করে আসছে এবং আগামী দিনে সেই চেষ্টা তার থাকবে এই কথা সে দিতে পারে.
buybengalihandicrafts.blogspot.com আজ বাঙলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলা শিল্প বাণিজ্য ব্লগ. এর মাধ্যমে ভারত তথা বিশ্বের নানান দেশের মানুষ বাঙলার শিল্পকলা অর্ডার দিয়ে থাকেন. কলাবতী মুদ্রা চেষ্টা করছে আগামীদিনে এই ব্লগটিকে আরও বেশি সুন্দর, আরও বেশি ক্রেতামুখী করে গড়ে তুলতে. বলা দরকার এই ব্লগটিকে আগামী দিনে আরও বেশি করে সাজানো হবে.
এ ছাড়াও সংস্থার নিজের ব্লগ, kalabotimudra.blogspot.comও সংস্থা চালাচ্ছে. এই ব্লগটিতে সংস্থার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কাজকর্ম প্রকাশিত হয়. আর রয়েছে kmneinititive.blogspot.com, যার মাধ্যমে কলাবতী মুদ্রা তার আসম সংক্রান্ত নানান প্রকল্প প্রকাশ করে.
দোকান
এর পাশাপাশি কলাবতী মুদ্রা আরও কয়েকটি উদ্য নিয়েছে যেখানে বাঙলার শিল্পীদের কলাকৃতি বছরের প্রায় সব দিনেই পাওয়া যায়. বিগত বছর থেকেই সে বেশ কয়েকটি দেকানের সঙ্গে কথা বলছিল.  এবছর দুটি দোকানে আপাততঃ সেই কথা পূর্ণতা পেল.
সে কলকাতার দুটি দোকানে বাঙলার হস্ত শিল্পকর্ম রাখছে. প্রথমটি পার্ক স্টিটের ডলিজ কালেকশন আর দ্বিতীয়টি জীবনদ্বীপের পেছনে, ভরত-বিনীতা মানসান্তার বইএর দোকান, আর্থ কেয়ার বুকসএ.  বিনীতা নিজে পরিবেশ-বান্ধব শিল্পে উত্সাহী. তিনি বাঙলার লৌকিক শিল্পের সম্ভবর নিজের দোকানে প্রদর্শণে কলাবতী মুদ্রাকে উত্সহ দেন.
আগামী দিনে বাঙলা জোড়া শুধুই বাঙলার শিল্পদ্রব্যের দোকান খোলার পরিকল্পনা করে চলেছে কলাবতী মুদ্রা.

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


(তৃতীয় অংশ)
মধ্যবিত্তের বিশ্বাসঘাতকতা এবং গ্রামীণ স্বাধীণতা সংগ্রাম
কলাবতী মুদ্রা বাঙলার নতুন ইতিহাস সন্ধানে  নামছে. এটি একটি বইএর আকারে প্রকাশিত হবে আগামী দিনে. বিষয় গ্রামীণ বাঙালির ব্রিটিশ বিরোধিতা এবং মধ্যবিত্তের বিশ্বাসঘাতকতা. এই বিষয়টি বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখছেন কলাবতী মুদ্রার কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বেন্দু নন্দ. কখোনো নিজের নামে এবং সখোনো নিজের ছদ্মনাম পার্থ পঞ্চাধ্যায়ী নামে. কলাবতী মুদ্রার অন্যতম পথ প্রদর্শক জয়া মিত্রর পত্রিকা ভূমধ্যসাগরএ এই দুই নামেই বিশ্বেন্দু বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছেন যার মূল বিষয় কলাবতী মুদ্রার কাজ করতে গিয়ে তিনি বাঙলার যে লৌকিক জীবনের অভিজ্ঞতালাভ করেছেন তাঁর নির্যাসটুকু.
কিন্তু এতেও সাধ মিটছিল না বিশ্বেন্দুর. তিনি বারবার কলাবতী মুদ্রার নানান বৈঠকে মধ্যবিত্তের বিশ্বাসঘাতকতা বিষয়ে যে লিখতে চান, তার ছাড়পত্র চাইছিলেন. যদিও ছাড়পত্র তাঁর নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তবুও তিনি কলাবতী মুদ্রার অছি পরিষদকে জানান যে এই কাজটি তিনি কলাবতী মুদ্রার নামেই করতে চান. বহু আলোচনার পর কলাবতী মুদ্রার অছি পরিষদ তাঁর এই আবেদনটি মঞ্জুর করে.
এই বছরেই তিনি হাওড়ার আলো পত্রিকায় এই বিষয়ে কয়েকটি লেখা লেখেন. কলাবতী মুদ্রা আশাকরে আগামী দিনে তিনি নতুন এই প্রকল্পে নতুন কিছু তত্ব বাঙলাকে দান করতে পারবেন. কলাবতী মুদ্রা পক্ষ থেকে বিশ্বেন্দুর গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে. নানান ধরণের সূত্র থেকে তিনি তাঁর নানান তথ্য সংগ্রহ করছেন. কলাবতী মুদ্রা তাকে শুভেচ্ছা জানায়.
পথব্যবসায়ী পুস্তক প্রকল্প
২০১০ সালে একটি ডেনমার্কের ছাত্রসংস্থা ইনোএইড কলকাতার পথ খাবার বিক্রেতাদের বিষয়ে উন্নয়ণের কাজ করতে আসে. প্রাথমিকভাবে সুন্দরবনের বাসন্তীর স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা জয়গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র কলাবতী মুদ্রার কর্মাধর্যক্ষ বিশ্বেন্দু নন্দকে এ প্রকল্প রূপায়ণে তাঁদের সাহায্য করতে অনুরোধ করেন. তিনি কলাবতী মুদ্রার অনুমতি নিয়ে এ বিষয়ে সহায়তা করতে রাজি হন, যেহেতু এক সময় বিশ্বেন্দু পথ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করা সংস্থায় বহুদিন স্বেচ্ছাব্রতীর কাজ করেছিলেন. সংস্থাটি জানায় বিশ্বেন্দুর অভিজ্ঞতা তাঁরা কাজে লাগাতে চান. সংস্থার পক্ষে বিশ্বজিত মহাকুড় এবং ডোনমার্কের প্রবাসী বাঙালি গণেশ সেনগুপ্ত প্রথমে বিশ্বেন্দুকে ব্যক্তিগতভাবে, পরে কলাবতী মুদ্রাকে পথ খাবার প্রকল্পে সামিল হতে অনুরোধ করেন. এই কাজ করতে ব্যক্তি বিশ্বেন্দু এবং কলাবতী মুদ্রা অপারগ, এই কাজে সে এবং কলাবতী মুদ্রা পরামর্শ দিতে পারে, এমন কথা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়.
পথের খাবার প্রকল্প শুরু হলে কলাবতী মুদ্রা সংস্থাকে পথ ব্যবসায়ী বিষয়ে একটি পুস্তক প্রকাশের অনুরোধ জানায়. সংস্থাটির সঙ্গে কলাবতী মুদ্রা এই পুস্তকটি যৌথভাবে প্রকাশ করবে. কলাবতী মুদ্রা জানায় পুস্তকের পরিকল্পনা, ভাবনা এবং লেখা যোগাড়ের দায়িত্ব তার. জয়গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র শুধু আর্থিক সাহায্য দিক.
শেষ পর্যন্ত লেখা যোগাড় হলেও আর্থিক টালবাহানায় এই বছরে বইটি প্রকাশ হতে পারে নি. কাজ চলছে. কলাবতী মুদ্রার আশা আগামী বছরেই এই বইটি প্রকাশিত হবে. বইটি সম্পাদনা করবেন দুটি নামেই বিশ্বেন্দু নন্দ.
পরে ইমেলচালাচালি এবং সংস্থাগত বৈঠকে ঠিক হয় পরের বছর ২৪ নভেন্বর এই পুস্তকটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পাবে, যেহেতু পরের বছর হকার উচ্ছেদের অপর নাম অপারেশন সাননশাইনের  ১৫ বছর পূর্ণ হবে.

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


(দ্বিতীয়াংশ)
কলাবতী মুদ্রার নতুন যুগ তৈরির উদ্যম
বিগত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন শিল্পের নথিকরণ আর শিল্পদ্রব্যের প্রচার-প্রসার এবং সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত বাঙলার গ্রামীণ লৌকিক ও আদিবাসীদের শিল্প পণ্য বিক্রয় করে সংগঠণ চালানে কলাবতী মুদ্রা এবছর দুটি বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটিকে লাগু করার কাজে অংশ গ্রহণ করেছে যাতে বাঙলা জুড়ে গ্রাম শিল্প বিষয়ে একটি জনমত তৈরি হয়.
প্রথমটি-  সে বাঙলার বড় শিল্প এবং উত্সব, দুর্গাপুজাকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে. ঠিক সেই জন্যই তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে সে কলকাতায় দুটি পুজো প্যান্ডেল তৈরি করার উদ্যম গ্রহণ করেছে. গত বছরের সমীক্ষায় আমরা জানিয়েছিলাম আমরা দুটি পুজো কমিটির সঙ্গে কথা চালাচ্ছি একটি ঠাকুরপুকুর ক্লাব অন্যটি গড়িয়ার রায়পুর ক্লাব. ঠাকুরপুকুর ক্লাবে নবদ্বীপের শিব-পার্বতীর বিয়ে আর রায়পুরে একটি অসমিয়া সত্র তৈরি করে সাড়া ফেলেদিয়েছে কলাবতী মুদ্রা. অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে, দুটিই স্টার আনন্দ স্পেশাল জুরি সম্মান এবং রায়পুর ক্লাব টেলিগ্রাফ সম্মান দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে.  আমরা যেন মনে রাখি, একটি প্যান্ডেল শুধুই বাঙলার লোকসংস্কৃতির প্রদর্শণ করেছে, অন্যটি একদা বৃহত বাঙলার অংশ অসমের চলতি সংস্কৃতি সত্র সংস্কৃতি প্রথম বাঙলায় প্রদর্শণ করেছে.
কলাবতী মুদ্রা তার এই কাজে খুবই গর্বিত এই জন্য, এই প্রথম বাঙলার নানান ধরণের প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া শিল্প প্রদর্শণ করতে পেরেছে সে. এতদিন ধরে কলকাতায় যেসব পুজো প্যান্ডেল হয়েছেতাঁরাও এতগুলো গ্রাম সংস্কৃতিকে কলকাতার দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে পারেন নি.
বিশেষ করে এবছর ঠাকুরপুকুর ক্লাবে দিনাজপুরের মেল্লি আর নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নতুনশম্ভুনগরের গ্রামীণ মহিলাদের আলপনার বাহার দর্শকের চোখ খুলে দিয়েছিল. জনপ্রিয় অভিনেত্রী মুনমুন সেন ঠাকুরপুকুরের পুজো উদ্বোধন করতে এসে মন্ডপে সাজিয়ে রাখা সমস্ত ধরণের গ্রামশিল্প দেখে পরিকল্প এবং উদ্যোক্তাদের সেগুলো তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন. এ ছাড়াও মন্ডপ যখন তৈরি হচ্ছে তখন পাড়ার বিশেষ করে মেয়েরা সেই সমস্ত উপকরণগুলোর সঙ্গে নিজের শিশুবেলাকে মেলাতে পারছিলেন এবং অনেকেই সেই সব দ্রব্য অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছেন.
পুজোর কাজ করতে গিয়ে পশ্চিমবাঙলার আপামর গ্রাম শিল্পী এবং অসমের নানান সত্রের সহযোগিতা ভেলবার নয়. বিশেষ করে কলাবতী মুদ্রা আজও প্রায় অগম্য মাজুলি দ্বীপের বেশ কিছু পাঁচ শতকের পুরোনো সত্রে ভ্রমণের সুযোগ পায়.
এছাড়াও কলকাতাস্থিত অসম ভবন প্রধাণ শ্রীগোকুল মোহন হাজরিকার সাহায্য ভেলার নয়. তিনি আর্থিকভাবে সাহায্য না করতে পারলেও ব্যক্তিগতভাবে এই সত্রে মন্ডপ, পুজাস্থলে তিনি বহুবার এসেছেন এবং আগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন. এছাড়াও অসম ভবনের নানান আধিকারিকও এবাবদে কলাবতী মুদ্রাকে বহুভাবে সাহায্য করেছেন. কলাবতী মুদ্রা প্রত্যেক শুভানুধ্যায়ীকে প্রণাম জানায় এবং এই সহযোগিতার জন্য নতুন করে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছে.
বলা দরকার এই দুটি উদ্যমে কলাবতী মুদ্রা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে বাঙলার কলাকৃতির সৌরভ ছড়িয়ে যায় দিগদিগন্তরে.
এই দুটি পুজোই সে বছর স্টার আনন্দের বিচারে বিশেষ জুরি সম্মান লাভ করে. এছাড়াও দুটি পুজো নানান পুরস্কার অর্জন করে. তবে রায়পুর ক্লাব টেলিগ্রাফের বিচারে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে. যদিও এই পুরস্কারগুলো উদ্যোক্তা ক্লাবেরই প্রাপ্য, তবুও কলাবতী মুদ্রা এই সম্মান লাভে গৌরব বোধ করছে.
তবে এতসব পুরস্কারের মধ্যে খেদ দুটি ক্লাব আর্থিক চুক্তিমত অর্থ কলাবতী মুদ্রাকে বাকি অর্থ শেষ পর্যন্ত দিতে অস্বীকার করে. নানান টালবাহানা করে বিপুল পরিমান অর্থ প্রায় আড়াই লাখ টাকা সে আর দেয় না. এবং এই দেনাও কলাবতী মুদ্রার অছি পরিষদ বহন করতে অস্বীকার করে. শেষ পর্যন্ত এই দেনা মেটান এই কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মাধক্ষ বিশ্বেন্দু নন্দ.
এই বছরেই সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বছর থেকে কলাবতী মুদ্রা আর কোনও পুজোর কাজ করবে না. বলে নেওয়া ভাল, ক্লাবগুলোর থেকে চাপ দিয়ে বকেয়া আদায় করা কলাবতী মুদ্রার দক্ষতার মধ্যে পড়ে না. আর সংস্থা কোনও দাতা সংগঠনের দান গ্রহণ করে না. এ ধরণের কাজে যদি প্রায় আড়াই লাখ টাকা দেনা শোধ করতে হয় তাহলে সংস্থার সব কাজই আটকে যেতে বাধ্য. যদিও এই কাজটির মধ্যে দিয়ে কলাবতী মুদ্রা বেশ কিছু ভাল কর্মী পেয়েছে. কিন্তু তার জন্য তাকে চরম প্রতিদান শোধ করতে হয়েছে. 

কলাবতী মুদ্রার বারমাস্যা ২০১০-২০১১, Annual Report of Kalaboti Mudra 2010-2011


কলাবতী মুদ্রার বারোমাস্যা
মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে বাঁচার নতুন পথে গ্রামশিল্প, শিল্পী
এই অত্যাশ্চর্য ধ্রুপদী লোকনাট্যরীতির জনপ্রিয়তা লোকসমাজে শ্রেষ্ঠতম আবার বলছি, শ্রেষ্ঠতম অবশ্য আরও লোক শিল্পেরমতই এর গায়েও মৃত্যুর ধূসর ছায়া পড়েছে মায়ামৃদঙ্গ, সৈয়দ মুসতাফা সিরাজ
মায়ামৃদঙ্গ উপন্যাসে আলকাপ গান(গ্রামীণ ভারত সভ্যতায় সব অভিকর শিল্পই গান) আর কিশোরী বেশী ছোকরা আর কুশীলবদের মরমীয়া মমতায় তুলে ধরেছিলেন সৈয়দ মুজতাফা সিরাজমশাই নিজের অভিজ্ঞতায় সিরাজমশাই লিখেছিলেন আলকাপ শিল্পজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ধূসর মৃত্যুর মনকেমন প্রতিবেদন মুক্তবিশ্বে সেই ছায়া আরও বড়, আরও গাঢ়, আরও গভীর হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে হস্তশিল্প, তাঁত, নাচ-গান-বাজনা-অভিনয়ে
মেদিনীপুর-নদিয়া-জলপাইগুড়ি-দিনাজপুর-কোচবিহার-দার্জিলিং-মুর্শিদাবাদ-হুগলির সুতি-রেশম-এন্ডি-মুগার তাঁত, মনসা-চন্ডীর শোলার মেল্লি আর ফুলের আচার, কালিকাচ নাচ, ডাং-সুতো-বেণী-ছায়া পুতুল নাচ, বন্ধুয়ালা গান, সং, বহুরূপী, লেটো, গাজন, মুখা খেইল নাচ, ডোমনি, মাছানি, খন, বোলান, বনবিবির পালা, চেরচুর্ণি, দেতরা, নাচনি, হাজারো ব্রতকথা-আচার-আচরণ, সত্যপীর পালা, বিষহরা পালা, পীর-পীরানি, মদনকাম নৃ্ত্য, বৈরাতি নাচ, ধেমাল নাচ, শিকনি ঢাল নাচ, ছো, রায়বেঁশে, নটুয়া, পাইক, ভাওয়াইয়া-চটকা, চা বাগানের গান, তিস্তাবুড়ির গান, তুখ্যা গান, সাধুগান, ধুয়া(ঢুয়া) গান, মনসা-চণ্ডী-ধর্ম-শীতলাসহ অন্য মঙ্গলগান, মনসার ঝাঁপান, বিষহরা, সত্পীর নাটক, জারি, সারি, মুর্শিয়া, ফকিরি, তেহট্টের মালপাহাড়িদের নাচ, নানান মুখোশ নাচ আর গান, পট, গাজির গান, ময়নামতির গান, গোপীচন্দ্রের গান, কবিগান, আখড়াই, হাফআখড়াই, জেলেপাড়ার গান, ধানভানার গান, চৌকো-চওড়া-চক্ষুদানপট গান, গাজিপট গান, পীরের গান, ফকিরি গান, মুর্শিদ্যা, পালাগান, লীলা গান, রামায়ণ গান, ঝুমুর, টুসু, ভাদু, সাঁওতালি, মুণ্ডারি, হো, লোধা নাচ-গান, রাভা নাচ, মেচ নাটক, মালপাহাড়ি নাচ, রাজবংশী সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙলার আরও হাজারও গ্রামীণ কৃষ্টি, হস্ত আর বয়নশিল্পে লেগেছে আলকাপের ধূসর মৃত্যুর ছোঁয়া
গ্রামীণ শিল্পীদের জীবনে বায়না আর বরাত না পাওয়া, প্লাসটিক আর বিদেশি পণ্যে হাট-বাজার দখল হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বেদনা, হাহাকার শিল্প-শিল্পী-জীবনে ফুটে উঠছে নিজের কাজ থেকে নীরবে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার আশংকা চাহিদাসংস্কৃতির চাপের বাইরে থাকা গ্রামীণ সংস্কৃতির নাভিশ্বাস প্রায়উদাসীন প্রচারমাধ্যম গ্রামীণ কৃষ্টি অশ্লীল, মোটাদাগের এবং লৌকিক, গ্রামের মানুষ অশিক্ষিত, দরিদ্র, নিরক্ষর, গ্রামের প্রযুক্তি পিছিয়ে পড়া, অনাধুনিক, প্রাচীণ - এই ইওরেপিয় দর্শণ ছড়িয়ে পড়ছে সরকারি নীতি, রাজনীতি আর গবেষণায় বাঁহাতে ছুঁড়ে দেওয়া চাকরি বাঁচানো প্রকল্প, সর্বরোগহর বিদেশি প্রযুক্তির প্রয়োগের একবগ্গা সিদ্ধান্তে গ্রামশিল্পসমাজে নাভিশ্বাস লৌকিক সংস্কৃতি মধ্যবিত্তের ভোট বাঁচানো, পিঠচাপড়ানির কুমিরছানা অশংকার কথা, আজও সফলভাবে বেঁচে থাকা বহু গ্রামশিল্প, শুধুই সম্মানের অভাবে নতুন প্রজন্ম বাপদাদার শিল্পে আসতে চাইচ্ছে না
ঐতিহ্যময় গ্রামশিল্প কেটেছেঁটে শহুরে বাজারে বিক্রি করতে দিল্লিতে একটি আস্ত মন্ত্রক বরাদ্দ হয়েছে সেই সরকারি প্রকল্পে বর্জ্য অশিল্প তৈরি হচ্ছে গ্রামকে মেনস্ট্রিমের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যোগ্য করে তুলতে বহু প্রকল্পে প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে কাজের কাজ খুব একটা কিছু হচ্ছে কীনা বোঝা যাচ্ছে না তবে গ্রামীণদের অংশগ্রহণ খুব কম
স্বাধীণতার পর ভারতে শুরু হয়েছিল টেকনলজি ট্রান্সফার প্রকল্প আজও চলছে ইওরোপ-আমেরিকা-জাপান প্রযুক্তির ঋণ নিয়ে দাঁড়াল রাজনেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাব্রতীদের সামনে এতে তিনটে পাখি মরল এক, পশ্চিমি প্রযুক্তি সর্বশক্তিমান, আধুনিক এবং সর্বরোগহর, এই দর্শণ গাঁয়ে পৌঁছে দেওয়া গেল দুই, যতটুকু দেশিয় প্রযুক্তি টিকে ছিল, তাকে প্রাচীণ, গ্রামীণ, পারম্পরিক, প্রিমিটিভ দেগে, উচ্ছেদ করে সসম্মানে জাদুঘরে সাজানোর প্রকল্প জুটল শহুরেদের জন্য গ্রাম মারার নতুন চাকরি তৈরি হল তিন, পশ্চিমি যন্ত্রপাতির বাজার শহর ছাড়িয়ে গ্রামে তৈরি হল যেমন শাঁখের করাত অত্যন্ত প্রাচীণ যন্ত্রটি প্রায় কাজ হারিয়েছে এসেছে বিদ্যুতে চলা কাটাই যন্ত্র বহু ছোট শাঁখারি উচ্ছেদ হচ্ছেন ড্রিল মেশিনে সূক্ষ্ম কাজ অসম্ভব নষ্ট হচ্ছে বাজার বিদেশি বাতিল যন্ত্রে দেশি প্রযুক্তির সর্বনাশ কারু, বস্ত্র শিল্পে উচ্ছেদ হচ্ছেন লাখো বংশপরম্পরার শিল্পী বাঙলায় স্বরস্বতী-হরপ্পার স্মৃতির গালার পুতুল, দিনাজপুরের শোলার মুখোশ, বীরভূমে সেরপাই, অথবা বাঁকুড়ায় দশাবতার তাস তৈরির কাজ এসে ঠেকেছে শুধু বৃন্দাবন চন্দ, মধুমঙ্গল মালাকার, শম্ভু, আর শীতল ফৌজদারদের পরিবারে
এই প্রবণতা বাড়ছে এঁরা নাছোড়বান্দা, কিন্তু কতদিন পেটের সঙ্গে সমঝোতা করে বাঙলার শিল্প বাঁচানোর দায় কাঁধে নিয়ে ঘুরবেন! শিল্প ছেড়ে ১০০ দিনের নিশ্চিন্ত কাজে পেট চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে বাঙলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের কয়েকটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে তবুও বাঙলা-বাঙালির হেলদোল নেই দক্ষিণ বাঙলায় পারম্পরিক শিল্পের অবস্থা দিন দিন অবনতি ঘটছে তুলনায় উত্তরবঙ্গ পরম্পরা, ঐতিহ্যের অনেক কাছাকাছি
কিন্তু এ কাঁদুনি আর কতদিন!