বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯

শিল্প গুরু নটরাজ এবং তাঁর প্রতীকগুলি

[নৃত্য গুরু নটরাজ এবং আমার সব প্রণম্য গুরুর প্রতি প্রণাম জানিয়ে এই ব্লগে নৃত্য এবং নৃত্য সম্বন্ধীয় যতটুকু বিদ্যা আমি গুরুদের পায়ের কাছে বসে শিখেছি, সেই প্রথাগত তত্ত্ব শিক্ষা এবং আমার দীর্ঘ কালের ভারতজোড়া অধ্রুপদী নৃত্যগুরুদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং তাদের কাছ থেকে শেখা দর্শন আগামী দিনে আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছি। তাত্ত্বিক নৃত্য বিষয়ে বাঙলায় খুবই কম কাজ হয়েছে। বাংলার নৃত্য বিষয়েও খুব বেশি কাজ হয় নি। অথচ প্রাচীন বাঙলা সাহিত্যে এবং মন্দিরগাত্রের স্থাপত্য এবং খোদাইতে বিপুল নৃত্য ভঙ্গীমার উপস্থিতি আছে যা আজকের বাঙ্গালির জীবনে অদৃশ্যপ্রায়। আমি সহ আজকের বাঙালি ভিন প্রদেশের নৃত্য অভ্যেস এবং প্রচার করি, অথচ বাংলার নিজের ধ্রুপদী এবং অধ্রুপদী নৃত্যের সম্বন্ধে খুব কিছু জানি না জানানো হয় না। আমার ক্ষুদ্র উদ্যোগে সেই চেষ্টাও জারি থাকবে। আমাদের যে সব বন্ধু, গুরু এই কাজগুলি করেছেন, তাদেরও আমি অনুরোধ করব এই ব্লগে তাঁদের কাজগুলি তুলে ধরার জন্যে।
আমার দুই বর্তমান গুরু ভরতনাট্যম নৃত্যশৈলীর গুরু খগেন্দ্র নাথ বর্মণ এবং সত্রীয়া নৃত্যশৈলীর গুরু রামকৃষ্ণ তালুকদারের চরণে ষষ্ঠাঙ্গ প্রণাম জানিয়ে আমার ভারতজোড়া নৃত্যবিষয়ক অধীত ও প্রায়োগিক বিদ্যা আপনাদের জন্য উতসর্গ করলাম। - ড ললিতা ঘোষ]

"আঙ্গিকং ভূবনং যস্য বাচিকং সর্ববাঙময়ম।
আহার্য্যং চন্দ্রতারাদি তং নুমঃ স্বাত্ত্বিকং শিবম।।"

এই জগত যার আঙ্গিক অভিনয় দ্বারা পরিচালিত, যার ওঁকার ধ্বনি তরঙ্গের মত আকাশে বাতাসে প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টি করেছে, চন্দ্রতারাদি যার আভরণ, সেই নৃত্যের আরাধ্য দেবতা নটরাজকে প্রণাম জানিয়ে নৃত্য সম্বন্ধে আমার অধীতবিদ্যার কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম।
গুরুপ্রতীম স্বামী প্রজ্ঞানানন্দর ভাষায় নটরাজই নৃত্য সৃষ্টির পরিচায়ক। অন্যভাবে বলতে গেলে, নটরাজের যে চার হাতের মূর্তি সেটি নৃত্যেরই পরিচয় জ্ঞাপন করে। নিচে আমি নটরাজ শিবের ছবিতে বর্ণিত তার মূর্তিতে নানান ভঙ্গীমার কি কি বিষয়ের মূর্ত প্রতীক সেটা আলোচনা করা গেল।
শিব নিজে নটরাজ যাঁর মধ্যে একাধারে তাণ্ডব এবং লাস্য উভয় প্রকার নৃত্যের সমাহার ঘটেছে, হাত পায়ের অভয় মুদ্রা যা প্রকাশ এবং গোপনীয়তা উভয়কেই সূচিত করে, যে নাগ তাঁর গলায় তিনবার পেঁচিয়ে থাকেন, তিনি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মূর্ত প্রতীক এবং শক্তির উৎস, হাতে ধরা ছোট ডমরু, সৃষ্টির কম্পন - ওম শব্দের  উৎস,
নটরাজের বর্তুলাকার চক্রে যে আগুণের শিখা আছে, সেগুলি ধ্বংসের প্রতীক;
বৃত্তাকারের তোরণটি আগুণের যে খিলান, সেটি ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম মৃত্যুর প্রতীক,
নটরাজের চূড়ায় যে চাঁদের উপস্থাপনে সেটির মাধ্যমে সৃষ্টি সূচিত হয়,
চুলের মধ্যে দিয়ে যেন গঙ্গা প্রবাহিত হয়ে সমস্ত অজ্ঞান দূর করেন, হাতে যে আগুণ সেটিও ধ্বংসের প্রতীক,
পায়ের তলায় যে অপস্মার নামক বামনটি রয়েছে, সেটিও অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত,

জয় নটরাজ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন